
মোঃ শাহজাহান বাশার,স্টাফ রিপোর্টার
ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট থানাধীন দুলার হাট এলাকায় ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও বিতর্কিত ঘটনা। মাত্র ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরী রোমা (ছদ্মনাম) দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক থাকার পর বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে গেলে প্রেমিক ও তার পরিবারের সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে মারধরের শিকার হয়। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন।
ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ৯ জুন। স্থানীয় আলাউদ্দিন মাস্টারের ছেলে মেহেদী প্রেমিক হিসেবে অভিযুক্ত। স্থানীয়দের বরাতে জানা যায়, বিয়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় রোমা ক্ষোভে প্রেমিক মেহেদীর বাড়িতে উপস্থিত হয়। এসময় মেহেদী, তার মা ও ভাই মিলে মেয়েটিকে বেধড়ক মারধর করে। মেয়েটি গুরুতর আহত হলে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দুলারহাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ধরনের একটি স্পষ্ট নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা না নেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে পুলিশ নিজেরাই ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত কিশোরীকে উদ্ধার করেছে, সেখানে মামলা না নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেষ্টা কেন?
প্রেমিক মেহেদীর বাবার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যস্থতায় এবং দুলারহাট থানার ওসি মাইল স্যারের সহায়তায় বিষয়টি সমাধান হয়েছে।” কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন, বিষয়টির কোনো মীমাংসা হয়নি এবং পুলিশ মামলাই নেয়নি, যা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করেছে।
এই বিষয়ে দুলারহাট থানার বর্তমান অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফ ইফতেখারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মেয়েটির বয়স ১৬ এবং ছেলেটির বয়স ১৯ বছর। দুই পরিবারকে ডেকে সামাজিকভাবে বিষয়টি মীমাংসার পরামর্শ দিয়েছি। তারা সম্মত হয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ না দিয়ে চলে যায়। পরে সামাজিকভাবে বসেছে কিনা, তা আমাদের জানায়নি। বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো।”
তিনি আরও জানান, “ছেলেটি ও মেয়েটি আত্মীয় — ভাইবোনের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও রয়েছে, এ কারণেই সামাজিক সমাধানের কথা বলেছি।”
স্থানীয় সূত্র ও মানবাধিকারকর্মীরা দাবি করছেন, অভিযুক্ত পরিবারটি এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় এবং কিছু রাজনৈতিক মহলের প্রভাব থাকায় পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এতে একজন কিশোরী প্রেমিকার ন্যায়বিচার প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়েছে।
একজন মানবাধিকার কর্মী বলেন, “মাত্র ১৩ বছর বয়সী একজন কিশোরী বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে গিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অথচ পুলিশ মামলা নেয়নি। এটি একটি ভয়ঙ্কর উদাহরণ, যেখানে প্রশাসনের নিরবতা অপরাধকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।”
এই ঘটনার পর পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের মাঝে ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। কিশোরীর পরিবার জানিয়েছে, তারা প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ে লিখিত অভিযোগ দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই ঘটনায় প্রশাসনের নিরব ভূমিকা ও পুলিশের গাফিলতি ভবিষ্যতের জন্য একটি বিপজ্জনক বার্তা বহন করছে। একটি কিশোরী যখন প্রেমের ফাঁদে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়, তখন আইনের শাসন কার্যকর না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে — এমনটাই মনে করছেন সচেতন মহল।