জুলাই ৮, ২০২৫
Home » তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি: ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনায় পুতিনের উদ্বেগ
image-62027-1750486682 (1)

মো. শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

 

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিশ্বকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেছেন, এই দুটি অঞ্চল এখন এমন একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি, যেখান থেকে বড় পরিসরের সামরিক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে—যা গোটা মানবজাতির অস্তিত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে।

গত শুক্রবার (২০ জুন) রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামের (SPIEF) মূল অধিবেশনে ভাষণকালে পুতিন এই মন্তব্য করেন। তার এই বক্তব্য শুধু উপস্থিত দেশি-বিদেশি অতিথিদের নয়, বিশ্ব গণমাধ্যম এবং কূটনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।

পুতিন তার ভাষণে বলেন,“বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সংঘর্ষের বিপুল আশংকা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা বৈশ্বিক যুদ্ধের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। প্রতিটি সংকটেরই উচিত শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান খোঁজা।”

বিশ্লেষকদের মতে, পুতিনের এই মন্তব্য বিশ্বশান্তি প্রক্রিয়ায় এক গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। বিশেষত, যখন ইউক্রেনে ন্যাটোর সমর্থনপুষ্ট সেনাবাহিনী ও রুশ বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে, এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-ইরান বিরোধ মারাত্মক রূপ নিচ্ছে—তখন এমন বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ দাবি করে।

পুতিন সরাসরি ন্যাটোর পূর্বমুখী সম্প্রসারণকে রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন,“এই জোট বারবার রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগকে অগ্রাহ্য করছে। এটি পশ্চিমাদের উপনিবেশবাদী নীতির আরেকটি রূপমাত্র।”

তিনি অভিযোগ করেন, পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক উত্তেজনা ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, যা একটি নতুন ধরনের ‘নিয়ন্ত্রণমূলক সাম্রাজ্যবাদ’।

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি প্রসঙ্গে পুতিন স্পষ্ট করে বলেন,“ইসরাইল যদি সত্যিই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করার কথা বিবেচনা করে থাকে, তবে আমি আশা করি এটি কেবল কথার কথা হিসেবেই থাকবে।”

তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি এমন কিছু ঘটানো হয়, তবে তা শুধু ইরান নয়, গোটা মুসলিম বিশ্বের জন্য ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।

পুতিন দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আশ্বাস দিয়েছেন যে, ইরানের বুশেহর পারমাণবিক স্থাপনায় কর্মরত রুশ প্রকৌশলীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করবে।

এই মন্তব্যে কূটনৈতিকভাবে কিছু জটিল বার্তা নিহিত রয়েছে। এটি স্পষ্ট করে যে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে একটি অন্তরালের যোগাযোগ বিদ্যমান রয়েছে—যদিও উভয় দেশের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ বহাল রয়েছে।

এ বিষয়ে রুশ প্রেসসচিব দিমিত্রি পেসকভ স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,“ইরানে সরকার পরিবর্তনের কথা যারা বলছে, তারা যেন মনে রাখে—এটা শুধু অগ্রহণযোগ্য নয়, বরং এতে দেশটিতে চরমপন্থার বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।”

তিনি আরও বলেন,“যারা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে হত্যা করার কথা বলছে, তারা যেন মনে রাখে—তাতে তারা এক ভয়ংকর প্যান্ডোরার বাক্স খুলে দেবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের বিস্তার রোধে কৌশলগতভাবে ইরানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে অপ্রত্যক্ষ বার্তা দিচ্ছে।

বিশ্ব রাজনীতিবিদ ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, যদি ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ জোরদার হয়, তাহলে তার সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ, খাদ্য উৎপাদন এবং শরণার্থী সংকটে। ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও অস্থির হয়ে পড়তে পারে।

পুতিনের বার্তা একটিই—এই সংঘর্ষমূলক পরিস্থিতি আর যেন না বাড়ে। তিনি বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছে শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের পথ নির্মাণ করতে।

বিশ্ব আজ এক চূড়ান্ত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। যেখানে নেতাদের একেকটি সিদ্ধান্ত হতে পারে কোটি মানুষের জীবনের প্রশ্ন। সময় এখন সংঘর্ষ নয়, শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *