
ফোরকান জামান, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
ডিজি’র আগমন, সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলে যাওয়া: বেনাপোলে রেল উন্নয়ন নিয়ে ক্ষোভ
২০২৫ সালের ২১ জুন (শনিবার) দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) আফজাল হোসেন রূপসী বাংলা ট্রেনে করে বেনাপোল আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনে পরিদর্শনে আসেন। সফরসঙ্গী ছিলেন প্রায় এক ডজন রেল কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মচারী। তবে তার এ আগমন স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে যে আশার সঞ্চার করেছিল, তা অল্প সময়েই হতাশায় পরিণত হয়।
রেলের বিভিন্ন অব্যবস্থা, চোরাচালান, নিম্নমানের অবকাঠামো ও যাত্রীসেবার দুরবস্থা সম্পর্কে মুখোমুখি হতে হবে—এই আশঙ্কাতেই হয়তো মহাপরিচালক সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি বলে অভিযোগ উঠেছে। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কোনো কথা না বলে দ্রুত স্টেশন ত্যাগ করেন, যা বেনাপোলের সাংবাদিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়।
স্থানীয় সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সদস্যরা অভিযোগ করেন, একাধিকবার প্রশ্ন করতে চাইলেও ডিজি কোনো সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান এবং রেলের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে টালবাহানা করে ফের ট্রেনে চড়ে বেনাপোল ত্যাগ করেন।
এদিকে, মহাপরিচালকের এই আচরণে হতাশ স্থানীয় জনগণও। তারা মনে করছেন, বেনাপোল স্থলবন্দর ও রেলস্টেশন থেকে প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব অর্জিত হলেও, এই অঞ্চলের রেল সংযোগ ও অবকাঠামো চরম অবহেলিত। সামান্য বৃষ্টিতেই রেললাইন ও স্টেশনে হাঁটুপানি জমে যায়। পণ্য ওঠানামার সময় কাদা ও জলাবদ্ধতা দুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলে।
জলাবদ্ধতা নিরসন, ও নিরাপত্তা জোরদারের দাবিতে মুখর স্থানীয়রা
স্টেশন এলাকায় নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ, চোরাচালানিদের সঙ্গে নির্দিষ্ট কতিপয় কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা এবং পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার ঘাটতি রেলের প্রতি জনগণের আস্থাকে নড়বড়ে করে তুলেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও সেগুলো শুধু “বুলিতেই সীমাবদ্ধ” থাকছে, বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দা মনিরুল ইসলাম বলেন,সীমান্তবর্তী এই জনপদ থেকে সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পায়, অথচ বেনাপোলের মানুষ পায় অবহেলা আর কাদা-পানি। ডিজি এসেও আমাদের সঙ্গে কথা না বলায় আমরা অপমানিত ও বঞ্চিত বোধ করছি।
স্থানীয় উন্নয়নকামী নাগরিক সমাজ ও বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আফজাল হোসেনের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, একজন জাতীয় পর্যায়ের কর্মকর্তা হয়ে জনসংযোগ ও জবাবদিহিতার এড়িয়ে যাওয়া অগণতান্ত্রিক এবং দুঃখজনক।
বস্তুত, মহাপরিচালকের এ আচরণ রেল উন্নয়নের নামে বরাদ্দ ও প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে।