
ফোরকান জামান, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে পরিচিত বেনাপোল পৌরসভা সম্প্রতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ১৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করলেও, পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড কাগজপুকুর আজও রাস্তাঘাট, ড্রেন, লাইটিংয়ের মতো মৌলিক নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয়রা জানান, বিগত দুই মেয়র আশরাফুল আলম লিটন এবং নাসির উদ্দিনের মেয়াদকালে একাধিকবার রাস্তার আবেদন করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো, কাগজপুকুর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মৃত আমিরুল ইসলাম জামায়াত ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে উন্নয়ন কাজ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে এই ওয়ার্ডকে বঞ্চিত করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মামুনুর রহমান জানান, “আমরা ৫-৬ বার পৌরসভায় লিখিত আবেদন করেছি, কিন্তু আজও রাস্তা পাকা হয়নি। বৃষ্টির মৌসুমে আমাদের এলাকার লোকজন জলাবদ্ধতায় ভোগে। শিশু, নারীরা হেঁটে চলাফেরা করতে পারে না। মনে হয় আমরা অন্য কোনো গ্রহের মানুষ।”
বর্তমানে ওয়ার্ডের সংযোগ সড়ক—আখতারুজ্জামান মার্কেট থেকে খেদাপাড়া পিচ রাস্তা পর্যন্ত—এখনো অসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। অথচ বিগত বাজেটে এই রাস্তার জন্য বরাদ্দ ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় শিল্পী খাতুন বলেন, “আমরা গরিব বলেই হয়তো পৌরসভার নজর আমাদের দিকে নেই। নয়-দশ বছর ধরে রাস্তা ছাড়াই জীবন কাটাচ্ছি।”
বর্তমানে বেনাপোল পৌরসভার দায়িত্বে রয়েছেন শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী নাজির হাসান। বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, তার কাছেও একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি এখনো সরেজমিনে কেউ দেখতে আসেননি।
পৌরসভার বাজেট অধিবেশনে জানানো হয়, এ বছর উন্নয়ন খাতে ১৬৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকার বেশি বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে রাস্তা, ড্রেন, পানি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং আধুনিক নাগরিক সেবায় ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে। তবে প্রশ্ন রয়ে গেছে—বিগত বাজেটগুলোর মতো এবারও কি বেনাপোল পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ড উপেক্ষিতই থেকে যাবে?
বেনাপোল পৌর প্রশাসক বরাবর উক্ত রাস্তার উপলক্ষে একাধিক বার আবেদন করা হলেও কোন কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
অঞ্চলের অনেকেই বলছেন, অতীতের বাজেটগুলোও ‘হরিলুটের’ শিকার হয়েছে। কাজ না হওয়া সত্ত্বেও অর্থ ব্যয়ের কাগজে-কলমে হিসাব দেখানো হয়েছে।
বেনাপোলের জনগণ এখন প্রশ্ন তুলছে—নতুন এই ইতিহাস গড়া বাজেট আদৌ কী কাগজপুকুরবাসীর ভাগ্য বদলাতে পারবে?