জুলাই ১২, ২০২৫
Home » সরকারের সহযোগিতা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়: সিইসি নাসির উদ্দিনের স্পষ্ট বক্তব্যে

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার

ঢাকা | ২১ জুন ২০২৫ —
বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্ক যখন তুঙ্গে, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের এক মন্তব্য নতুন করে জাতীয় রাজনীতিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেছেন,শনিবার (২১ জুন) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) অনুষ্ঠিত নির্বাচনি আইন ও বিধিমালা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন।

সিইসি তার বক্তব্যে বলেন,“নির্বাচন ইস্যুতে সময় এলেই সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে। সরকার ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়। সরকারের সঙ্গে কমিশনের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। নির্বাচন আয়োজন করতে গেলে সরকারের মুখ্য ভূমিকা দরকার। এজন্য কমিশনের নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা আছে। প্রয়োজনে সেটি পরিবর্তন করা হবে।”

সিইসির এই বক্তব্য রাজনৈতিক মহলে নানা ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে বাস্তবসম্মত স্বীকারোক্তি হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা তাহলে কোথায়?

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৭২ সালের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

তবে বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন, পুলিশ, মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা ছাড়া নির্বাচন আয়োজন প্রায় অসম্ভব।

সিইসি তার বক্তব্যে এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে বলেন,“নির্বাচনের সকল কার্যক্রমে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনিক সহযোগিতা অপরিহার্য। এ সহযোগিতা ছাড়া কোনো পর্যায়ে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব নয়।”

সিইসির এই বক্তব্য এমন সময় এসেছে, যখন দেশে নির্বাচন ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশ্ন উঠছে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং পরে বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ ছিল—নির্বাচন কমিশন সরকারি প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিইসির এই মন্তব্য বাস্তবতা স্বীকার করলেও এতে কমিশনের নিরপেক্ষতা ও ক্ষমতার প্রশ্ন নতুন করে সামনে এসেছে।

সিইসির বক্তব্যের পরপরই রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সরকার পক্ষের মতে, নির্বাচন কমিশনের এ বক্তব্য একটি বাস্তবতানির্ভর অবস্থান। নির্বাচন আয়োজনের জন্য মাঠ প্রশাসন ও সরকারি যন্ত্রকে সম্পৃক্ত করতেই হয়। অন্যদিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে বিএনপি ও সমমনা জোটগুলো বলছে—এই বক্তব্যে প্রমাণিত হয়েছে যে, ইসি স্বাধীন নয়; বরং সরকারের ওপর নির্ভরশীল।

সিইসি আরও জানান, কমিশনের নির্ধারিত কর্মপরিকল্পনা রয়েছে এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বিবেচনায় প্রয়োজনে তা সংশোধন করা হতে পারে। তিনি বলেন,“আমরা বাস্তবতা বিবেচনায় প্রতিটি ধাপে কাজ করবো। প্রয়োজনে কর্মপরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হবে।”

সিইসির এই বক্তব্য শুধু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নয়, বরং দেশের সামগ্রিক নির্বাচনি সংস্কৃতি, গণতন্ত্রের চর্চা ও জনগণের আস্থার বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে।

সরকার ও কমিশনের আন্তরিকতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত অংশগ্রহণই পারে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *