

মোঃ শাহজাহান বাশার , স্টাফ রিপোর্টার:
স্কাউটিং শুধু একটি সহশিক্ষা কার্যক্রম নয়, বরং এটি আত্ম-আবিষ্কারের এক অনন্য মাধ্যম—বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, “দুনিয়া ও নিজেকে আবিষ্কারের সুযোগ তৈরি করে স্কাউটসের কার্যক্রম। গৎবাঁধা ছাত্রজীবনে নিজের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার আর সুযোগ থাকে না। তোমাকে তোমার সঙ্গে পরিচিত করে দেওয়ার জন্য স্কাউটিং একটা বড় দরজা খুলে দিয়েছে।”
সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে আয়োজিত বাংলাদেশ স্কাউটসের দেশব্যাপী কাব কার্নিভালের উদ্বোধন ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে আরও বলেন, “শিশু-কিশোরেরা যখন স্কাউটিংয়ের আদর্শে বেড়ে ওঠে, তখন তারা শুধু নিজের ভেতরের শক্তিকে আবিষ্কার করে না, বরং সমাজ ও দেশের সেবায় আত্মনিয়োগ করতেও প্রস্তুত হয়। স্কাউটিং তাদের দায়িত্বশীল, মানবিক ও নেতৃত্বগুণসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “তোমাদের ভিতরের শক্তিকে চিনতে শেখো, নিজের সীমাবদ্ধতা টপকে যাও—এই শিক্ষাই দেয় স্কাউটস। এটা এমন এক যাত্রা যেখানে গন্তব্য শুধু নিজের উন্নয়ন নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণও।”
ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশের স্কাউটরা ইতোমধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য এবং নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে চারজন স্কাউট আত্মাহুতি দিয়েছেন। স্কাউটিংয়ের ইতিহাসে এমন নজির বিশ্বের আর কোথাও নেই।”
এই বক্তব্যের সময় উপস্থিত স্কাউট সদস্য, প্রশিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। সকলে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান সেই আত্মত্যাগী স্কাউটদের প্রতি।
অনুষ্ঠানে ‘কাব কার্নিভাল ২০২৫’ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কাব স্কাউট সদস্যরা অংশ নেন। পাশাপাশি কাব স্কাউটদের সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ স্কাউটসের জাতীয় কমিশনারবৃন্দ, বিভিন্ন অঞ্চলের স্কাউট নেতৃবৃন্দ, অভিভাবক, শিক্ষক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূস বলেন, “আজকের শিশু-কিশোর স্কাউটরাই আগামী দিনের সৎ, কর্মঠ ও মানবিক নেতৃত্বের বাহক। তোমরা যদি সঠিক পথে নিজেদের গড়ে তোলো, তাহলে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা বিশ্ব তোমাদের হাত ধরে এগিয়ে যাবে।”
তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্কাউটিং কার্যক্রম আরও বিস্তৃত করার আহ্বান জানান এবং জাতীয় পর্যায়ে এর গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ স্কাউটসের এই আয়োজনে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য নতুন প্রজন্মের মাঝে আত্মবিশ্বাস, দায়িত্ববোধ এবং দেশপ্রেমের বার্তা পৌঁছে দেয়। স্কাউটিং যে শুধু খেলার মাঠে বাঁধা নয়, বরং জীবন গঠনের এক পরিপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম—এই উপলব্ধির দরজা খুলে দেয় তার আজকের বক্তব্য।