জুলাই ৮, ২০২৫
Home » ধামইরহাটে আশ্রয়হীন এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন
1000064183
ধামইরহাটে আশ্রয়হীন এক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন। ভুমিহীন সেই প্রতিবন্ধীর নেই মাথা লুকানোর মতো ছোট একটি ঘর। মেলেনি সরকারি তেমন কোন সুযোগ-সুবিধা। জীবন জুড়েই রয়েছে খাদ্য সংকট। সামান্য একটু মাথা গোঁজার ঠাই পেতে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তাঁরা আশ্বাস দিলেও ভাগ্যে জোটেনি কোন ধরনের সহায়তা।
বলছিলাম নওগাঁ জেলার ধামইরহাট উপজেলার কাদিপুর মৌজার দৌলতপুর গ্রামের অফির উদ্দিনের প্রতিবন্ধী মেয়ে বানু (৬৫)র জীবন-যাপনের কথা। ভুমিহীন, আশ্রয়হীন প্রতিবন্ধী বানুর গ্রামে গিয়ে জানা যায় তার কষ্টের জীবনের অজানা সব কথা। শারিরীক, মানসিক, শ্রবনশক্তিহীন বানু অর্থনৈতিক সংকট ও চরম দারিদ্র সিমার নিচে বসবাস করছেন। নিজের বলতে কিছুই নেই এমন কি রান্নার জন্য একটি চুলাও নেই তার। এক বেলা খাবার জুটলেও দু’বেলা না খেয়ে দিন পেরিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমার সম্পদ বলতে কিছুই নেই এমন কি মাথা গোঁজার মত একটা জায়গাও নেই ফলে কখনো ছোট বোনের বাশের কন্চি দিয়ে ঘেরা ছোট একটি জরাজীর্ণ ঘরে রাত্রী যাপন আবার কখনো অন্যের ঘরের বারন্দায় কখনো আবার গাছের নিচে রাত কেটে যায়। কারো সাথে বিয়ে করে ঘর-সংসার করবে তেমন শারীরিক প্রস্তুততো নন তিনি। জন্মলগ্ন থেকেই শরিরের প্রত্যেকটি অঙ্গে বাসা বেঁধে আছে প্রতিবন্ধীর প্রভাব। দু’চোখ দিয়ে ঝাপসা দেখেন তিনি। আবার কানেও কম শুনতে পান। প্রকৃতির নিষ্ঠুর নির্মমতা তার শরিরে বিস্তার লাভ করে আছে। সেই কারণে সমাজের মুল স্রোত ধারা থেকেও সে বিচ্ছন্ন। সমাজের সহানুভূতি ও সহায়তার চরম অভাব বলে বানু প্রতিবেদক জানান।
জীবন বাঁচার তাগিদে দু’মুঠো ভাতের জন্য অন্যের জমিতে ধান কুড়িয়ে যতটুকু ধান জড়ো হয় সেই ধান সিদ্ধ করে চাল করেন। সেই চালটুকুই তার জীবিকার এক মাত্র সম্বল। পোশাক আশাক পরে অন্যজনের ব্যবহৃত পুরনো অথবা কেউ দান করলে। অন্য,বস্ত্র,বাসস্থান এই তিনটি মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত প্রতিবন্ধী বানু।
ভুমিহীন বাবা সৎ মাকে নিয়ে আলাদা বসবাস করেন। সারা বছরে প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য একমুঠো ভাত বাবার পাতিলে রান্না হয় না। এমন কি খোঁজ খবরও রাখেননা। তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন আমার নিজের মা বেঁচে থাকলে হয়তো মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে এনে আমাকে খাওয়াতো সেই সৌভাগ্য টুকু আমার কপালে নেই। আমি এখন কি করবো কোথায় যাব সে চিন্তায় দুঃখের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। আমার জীবনের শেষ ইচ্ছে মৃত্যুর আগে সরকারি বা বেসরকারি সহায়তায় মাথা গোঁজার মত যদি একটা ঘর পেতাম তা হলে আমার শেষ ইচ্ছে টুকু পুরুন হতো। খেয়ে না খেয়ে শান্তিতে একটু নিজ ঘরে ঘুমাইতে পারতাম।
মানসিক ও বাক প্রতিবন্ধী, দিশেহারা বানু কানে কম শোনে চোখেও কম দেখে, কাজ করার সক্ষমতাও নেই।দীর্ঘদিন ধরে মানবেতর জীবন যাপন করলেও ভাগ্যে জোটেনি সরকারি আশ্রয় প্রকল্পের একটি ঘর। সুবিধা ভোগের উপযুক্ত হয়েও নিজস্ব মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় আক্ষেপ আর চরম হতাশা নিয়ে বেঁচে আছে। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও মৃত্যুর আগে মাথা গোঁজার ঠাঁই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকলেও, সেসব থেকে বঞ্চিত বানু। সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো এগিয়ে আসলে অনুদান সহায়তা করলে অবহেলিত বানুর পাশে দাঁড়ালে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেত। বানুর ছোট বোন আঞ্জু অন্যের জমিতে রাস্তার পাশে বেড়া দিয়ে ঘেরা ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছে। শারীরিক, মানসিক, বাক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বানুকে নিয়ে মাঝে মধ্যে সেখানে রাত্রি যাপন করে। কখনো রাস্তায় ঘুরেফিরে প্রতিবেশির বাড়ির বারন্দায়, কখনো আবার গাছের নিচে রাত্রি যাপন করে বলে বানুর ছোট বোন আঞ্জু প্রতিবেদককে জানান। এমন দুঃখ দুর্দশা তার মাথা গোঁজার ঠাঁই পেতে চায় অবহেলিত বানু।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *