

হামিদুর রহমান,তানোর (রাজশাহী)
প্রতিনিধি : রাজশাহীর তানোর উপজেলায় ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও আধুনিকায়নের চাপে খেলার মাঠ ও ফাঁকা জায়গা হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শিশু-কিশোরদের প্রাণবন্ত শৈশব। আগের মতো আর দেখা যায় না বৃষ্টিভেজা বর্ষাকালে দলবেঁধে মাঠে ফুটবল খেলার দৃশ্য। আজকের শিশুরা ফুটবল নয়, বেছে নিচ্ছে মোবাইল, ট্যাব ও টিভির পর্দা।
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলাধুলার চিত্র এক সময় গ্রামের প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ছিল পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা। হোক তা জমির মাঠ, বাড়ির আঙিনা কিংবা স্কুলের খেলার মাঠ—সব জায়গায় সন্ধ্যার আগে আগে শিশুরা খেলাধুলায় মেতে উঠতো। বর্ষার দিনে ফুটবল, শীতকালে গাদল, গোল্লাছুট কিংবা কাচভাঙ্গা, আর ঈদের ছুটিতে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট—এসব যেন শৈশবের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। কিন্তু এখন? এমন দৃশ্য যেন শুধুই স্মৃতির পাতায় বন্দি।
মাঠ নেই, পরিবেশ নেই, আছে মোবাইল ও কার্টুন আসক্তি তানোর পৌরসভার মতো এখন গ্রামেও নেই খেলার উপযোগী খোলা জায়গা। ছোট ছোট মাঠ গুলোতে গড়ে উঠেছে বসতি, বানিজ্যিক স্থাপনা কিংবা পার্কিংয়ের মতো নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় শিশু-কিশোররা বন্দি হয়ে পড়ছে মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। পড়ালেখার চাপের পাশাপাশি ‘কার্টুন-গেম’ নির্ভর জীবনে তাদের মনোযোগ এখন ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ। একটি শিশুর সামাজিক বিকাশে খেলাধুলা, দলগত কার্যক্রম এবং বাইরের পরিবেশের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার চাপে শিশুরা আজ শৈশবের আনন্দই হারিয়ে ফেলছে।
আগে সকাল হতেই শিশুরা দলবেঁধে মক্তবে, মাদ্রাসায়, কিংবা স্কুলে যেত। শিক্ষকের শাসন, বন্ধুদের সঙ্গে পড়া, খেলা—সব মিলিয়ে ছিল এক প্রাণবন্ত পরিবেশ। আজ সেই পরিবেশে ছেদ পড়েছে একগাদা বই, হোম টিউটর আর ক্লাসের রেজাল্ট নিয়ে এক অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে।
বর্তমান শিক্ষানীতিতে শিশুদের ঘাড়ে বইয়ের ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে খুব অল্প বয়সেই। ‘মেধাবী হতে হবে’—এই চাপ যেন এখন প্রতিটি অভিভাবকের মুখে মুখে। যার কারণে বিকেল বেলার খেলার সময় এখন পরিণত হয়েছে হোম টিউটরের সময়সূচিতে। ছোট ছোট শিশুরা যখন চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে পড়তে থাকে, তখন তাদের মন-বিনোদন আর খেলাধুলার জায়গা থাকে না।
এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য চাই তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত সালমানের সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ।
প্রতিটি এলাকায় পরিকল্পিতভাবে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ সংরক্ষণ ও নির্মাণ করা।
স্কুল পর্যায়ে নিয়মিত খেলাধুলা আয়োজন করা।প্রযুক্তি ব্যবহারে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া এবং তা মনিটর করা।অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুরা শুধু পড়ালেখার চাপেই নয়, খেলাধুলার অভাব ও সামাজিকীকরণের ঘাটতির কারণে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে উঠছে। শিশুর শৈশব একবারই আসে। তানোরে যেমন মাঠ হারিয়ে যাচ্ছে, তেমন হারিয়ে যাচ্ছে শিশুরা তাদের আনন্দ-উচ্ছ্বাসসহ একটি স্বাস্থ্যবান ও প্রাণবন্ত শৈশব থেকে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে ক্লান্ত, একঘেয়ে এবং নিস্পৃহ। তাই এখনই সময় শিশুদের জন্য মাঠ ফিরিয়ে আনার।