জুলাই ৮, ২০২৫
Home » অবৈধ ৮০ দখলকারের মধ্যে মাত্র ২৫ দোকানঘর আংশিক ভাঙা হয়েছে।অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি জনগনের

মোঃ নুর হোসেন  কমলনগর প্রতিনিধি

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র হাজিরহাট বাজারে জারিরদোনা খালের ওপর স্থাপিত দোকানঘরসহ ৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে প্রশাসন। স্থানীয় ঘর মালিকরা জারিরদোনা খালের বহুতল ভবন ও দোকানঘর নির্মাণ করে খালটিকে নিশ্চিহ্ন করে তুলেছে এতে পানি সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে হাজার হাজার পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়ে।

এদিকে খালের ওপর স্থাপিত তিনটি অবৈধ বহুতল ভবননের মালিকরা উচ্চ আদালত থেকে সাময়িক  স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন। এজন্য বুধবার অভিযানের সময় ভবনগুলো ভাঙা হয়নি।

বুধবার (২৫ জুন) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মজিবুর রহমানের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় দেয়াল ধসে তিনজন শ্রমিক আহত হন। তাদেরকে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও উপজেলা প্রশাসন যৌথ অভিযানটি পরিচালনা করেন। ঈদের আগে অবৈধ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোটিশ প্রদান ও মাইকিং করা হয়। ২২ জুন দ্বিতীয় বারের মতো মাইকিং করে স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কেউই স্থাপনাগুলো সরিয়ে নেয়নি। এছাড়াও ৮০ অবৈধ দখলকারের মধ্যে প্রায় ২৫ দোকানঘর আংশিক অংশ নিজ উদ্যোগে ভাঙলে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।তাদের আশংকা, কর্তৃপক্ষ আজকের এই এক তৃতীয়াংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ক্ষান্ত দিলে অভিযান লোক দেখানো বলে সংশয়ের সৃষ্টি হবে।বাকি প্রায় ৫৫ টি স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যক্রম চলমান রাখার দাবি সর্বসাধারনের।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মজিবুর রহমান বলেন, খালের ওপর থেকে স্থাপনা সরিয়ে নিতে নোটিশ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থাপনাগুলো সরানো হয়নি। এতে অভিযান চালিয়ে দোকানঘরসহ ৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা শুরু হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ৩টি বহুতল ভবন কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেওয়ায় সেগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসন ও খালের প্রবাহ পুনরুদ্ধারে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে এখন পর্যন্ত জামাল হোসেন, শাহাব উদ্দিন রনি, মোস্তফা মেস্তুরী, ছায়েদুল হক, কবির হোসেন,নুর হোসেন ব্যাপারীর দখলকৃত ৬টি ঘর সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মহিউদ্দিন ভবন থেকে বাজারের দক্ষিণের বিসমিল্লাহ হোটেল পর্যন্ত ঘর গুলো নিজ উদ্যেগে আংশিক ভাঙা হয়েছে। বিসমিল্লাহ হোটেলের দক্ষিণ থেকে হাদি মাষ্টার বাড়ির দরজা পর্যন্ত ঘর গুলো এখনও ভাঙা হয়নি। আজকের অভিযানে এখন পর্যন্ত খালের উপর দোকান মালিকদের অবৈধ উপায়ে নির্মিত ৫ টি কালভার্ট সম্পূর্ণ ও ৪ টির ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি কালর্ভাট ভাঙতে প্রশাসনের লোকজন গড়িমসি করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

উচ্ছেদকৃত দোকান মালিক মোঃ জামাল হোসেন বলেন, উত্তরাধিকার সূত্রে আমি একটি দোকানের মালিক ছিলাম। এখন মানুষের প্রয়োজনে খালটি সচল রাখতে ঘর গুলো উচ্ছেদ করেন। তাই প্রশাসন আমার দোকানটি ভেঙ্গে দিয়েছে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে প্রশাসনের এই উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এখন শুনতেছি রহস্যজনক কারণে কিছু কিছু ভবন ও স্থাপনা ভাঙ্গা হবে না। যদি এমনটা হয় তাহলে আমাদের সাথে জুলুম আর বৈষম্য হবে। আশা করি এমনটা না হয়ে খালের উপর থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শেষে খননের মাধ্যমে সচল রাখা হয়।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাহাত উজ জামান বলেন, খালের উপর অবৈধভাবে দখল হওয়া দোকানঘর উচ্ছেদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। অভিযান চলাকালে একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেয়াল ধসে তিনজন শ্রমিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় । একজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *