জুলাই ৮, ২০২৫
Home » দুপচাঁচিয়া কইলে রাস্তায় বালু ফেলে ঠিকাদার উধাও, ভোগান্তিতে এলাকাবাসী 
Screenshot_20250701_123200~2
সুশান্ত মালাকার, দুপচাঁচিয়া, বগুড়া প্রতিনিধিঃ

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া ইউনিয়নের কইল গ্রামে ইন্তাজের বাড়ি হইতে সাবেক ইউপি সদস্য অশোক কুমার দেব এর বাড়ি পর্যন্ত ৫শ মিটার সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজ এখন এলাকাবাসীর জন্য এক স্থায়ী দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে। রাতের আঁধারে রাস্তাটি খননের ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও শুধুমাত্র বক্স কাটিং করার পর অবশিষ্ট কাজ না করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘদিন যাবত কাজটি বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে দুপচাঁচিয়া উপজেলার প্রকৌশলীকে মৌখিকভাবে একাধিক বার তাগাদা প্রদান করা সত্তেও জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজটি শুরু করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি নাম না জানা এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারের এরূপ অনিহা ও উদ্যোগহীনতার কারণে কাজটির বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হওয়ার কারণে জনস্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার উপরে থাকা হিয়ারিং বন্ডের ইট গুলো তুলে বক্স কাটিং করে শুধুমাত্র বালু ফেলে রাখা হয়েছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় খুঁড়ে রাখা মাটি ও বালু মিশে রাস্তা চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতেকরে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছে হাজার হাজার মানুষ সহ মাদ্রাসা-স্কুলগামী কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এই রাস্তাকে কেন্দ্র করে আশপাশের প্রায় ৫ /৬ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ চরম বিপাকে পড়েছেন। এই ৫শ মিটার রাস্তার মধ্যে রয়েছে ১টি মাদ্রাসা,  ১টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি সরকারি কলেজ। রাস্তার বেহাল দশার কারণে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা।
কইল গ্রামের মোতালেব প্রামানিক,  মোস্তফা, আশরাফ আলী প্রামানিক, মোঃ গাজীউল ইসলাম, রমজান আলী, সহ একাধিক গ্রামবাসী জানান, আমাদের এলাকার অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় কৃষিকাজ করে আমরা আমাদের জীবিকা নির্বাহ করি। এই সড়ক ছাড়া ধান আলু সহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া আসার বিকল্প কোনো পথ নেই। ৫/৬ গ্রামের মানুষ এই পথ দিয়ে পণ্য আনা-নেওয়া করে। এই সড়কটি সঠিক সময়ের মধ্যে ঠিক না করলে পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। আর এজন্য আমরা ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি না। গত মৌসুমেও আমাদের এরকম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে কোন গাড়ি ঢুকতে চাচ্ছে না। পরিবহন খরচ দ্বিগুণ দিতে চাইলেও তারা আসছে না। রোগী পত্র হাসপাতালে নিয়ে যেতেও আমরা পারছি না। কারণ এই রাস্তায় গাড়ি ঢুকলে চাকা ডেবে যায়, গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। কইল গ্রামের  ভ্যানচালক শাহজাহান আলী আক্ষেপ করে বলেন, এ আস্তা (রাস্তা) দিয়ে  কোন মালামাল নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না, বালুর মধ্যে চাকা ডাবা (দেবে) যায়। একটু প্রেসার দিলেই মোটর পুড়ে যায়। গত ছয় মাসে আমার ভ্যানের দুইটি মোটর পুড়ে গেছে। আমার এই ক্ষতিপূরণ কে দিবে। হামরা তো গরিব মানুষ, আমাদের দুঃখ আর কে দেখবে।
আলতাফ নগর ইবনে সৈয়দ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে জানান, রাস্তায় শুধুমাত্র বালু আর বালু। এমতাবস্থায়  দীর্ঘদিন থেকে আমাদের স্কুলে যাতায়াত করার জন্য খুবই কষ্ট হয়ে পড়েছে। আমরা রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এদিকে আলতাব নগর ইবনে সৈয়দ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক প্রদীপ কুমার প্রাং জানান, আমাদের কইল গ্রামটি ঘন বসতিপূর্ণ এলাকা এই গ্রামে হিন্দু ও মুসলিম উভয়ে বসবাস সেই সঙ্গে স্কুল কলেজ সহ মসজিদ মন্দির রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের এই গ্রামের রাস্তার এই অবস্থার কারণে উৎসব ও পূজা পার্বণ করা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন বিগত সময়ে রাস্তাটি খনন করে ফেলে রেখে ঠিকাদার চলে যায়, সেই সময় জাতীয় দৈনিক মানবাধিকার প্রতিদিন পত্রিকায় কইল গ্রামে রাস্তা খুঁড়ে ঠিকাদার উধাও দুর্ভোগে ৬ গ্রামের মানুষ শিরোনামে একটি নিউজ প্রকাশিত হয়। এই শিরোনামে নিউজটি প্রকাশিত হবার পর রাতের আঁধারে রাস্তায় কিছু বালু ফেলে রেখে চলে যায় ঠিকাদার। এ বিষয়ে একাধিকবার ফোন করে ঠিকাদার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই প্রতিবেদক কে জানান দুই একদিনের মধ্যেই ওই রাস্তাটির কাজ শুরু করা হবে এই বলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *