জুলাই ১২, ২০২৫
Home » কমলনগরে পাটোয়ারীহাট ইউনিয়ন পরিষদে ভিজিডির চাল বিতরণে ‘খরচের’ অর্থ আদায়
1000016726
মোঃ হাসান হাওলাদার, কমলনগর প্রতিনিধি 
কমলনগরের পাটোয়ারীহাট ইউনিয়নে দুস্থ নারীদের উন্নয়নের জন্য ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচির কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাল বিতরণ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিব সাহাদাত হোসেন ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বশিরের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা এমনি অভিযোগ করেন। কর্তৃপক্ষ দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। জানা যায়, ভিজিডির অধীনে দুস্থ নারীদের জন্য ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই বছর মেয়াদে পাটোয়ারীহাট ইউনিয়নে ২৩০টি কার্ড বরাদ্দ দেন সরকার। এ কার্ডধারীদের প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চাল বিতরণে নিয়ম নেই। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নতুন তালিকা না হওয়ায় পুরোনো তালিকা অনুযায়ী ভিজিডির চাল বিতরণ হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত পাঁচ মাসের চাল বিতরণ বন্ধ ছিল। পরবর্তী প্রত্যেক কার্ডধারীকে ৫ মাসের মোট ১৫০ কেজি ভিজিডির চাল একত্রে বিতরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পাটোয়ারীহাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে ২২ জুন থেকে চাল বিতরণ করা শুরু হয়। সেই চাল সংগ্রহকালে পরিবহণ খরচের কথা বলে উপকারভোগীদের প্রত্যেকের কাছ থেকে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব ৩০০ টাকা করে আদায় করেন। এভাবে ২৩০ জন উপকারভোগীর কাছ থেকে ৬৯ হাজার টাকা আদায় করে ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেন তদসংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, পাটোয়ারীহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক একেএম নুরুল আমিন রাজু ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক থাকায় ওই ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুর্য্য শাহা। আর প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন ৬নং ওয়ার্ড সদস্য মো, বশির। তবে প্রশাসক অতিরিক্ত দায়িত্ব
কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো জড়িত সচিব ও প্যানেল চেয়ারম্যান
পালন ও মূল দায়িত্ব উপজেলা দপ্তরে বেশি সময় দেওয়ার সুযোগে প্যানেল চেয়ারম্যান বশির ও সচিব সাহাদাত হোসেন পরিষদের সব কার্যক্রম নিজেদের মর্জি-মতে পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরজমিনে গিয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী পারুল আক্তার, নুরভানু ও সালেহা বেগমসহ অনেকেই বলেন, চাল দেওয়ার আগে খরচের কথা বলে সচিব সাহাদাত হোসেন ও বশির মেম্বার প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নিয়েছেন। তখন মনে করেছিলাম এবার ভিজিডি চাল বিতরণে সরকার হয়তো নতুন নিয়ম করেছে। সে জন্য টাকা নিচ্ছে। কিন্তু এখন লোকজনের কাছ থেকে জানা যায় আগের নিয়মই নাকি আছে। চাল নিতে কোনো টাকা দেওয়া লাগে না। আমাদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে টাকা নিয়েছে। এটার একটা বিচার হওয়া উচিত। অভিযুক্ত ইউপি সচিব মো. সাহাদাত হোসেন বলেন, পরিষদের আয় না থাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স হিসেবে উপকারভোগীদের কাছ থেকে ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এর আগেও একই কথা বলে টাকা নিয়েছেন; তাছাড়া একজন ব্যক্তি বছরে কতবার ট্যাক্স দিতে হয়য় এমন প্রশ্নের জবাবে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। প্যানেল চেয়ারম্যান মো. বশির বলেন, চাল বিতরণে পরিবহণ খরচ সরকারিভাবে দেওয়া হয় না। যে কারণে পরিবহণ খরচের জন্য ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। অবশ্য প্রশাসক তুর্য্য শাহার দাবি, ভিজিডির চাল বিতরণে পরিবহণ ব্যয় পরিষদের তহবিল থেকে সমন্বয় করা হয়।
তাছাড়া উপকারভোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা সম্পূর্ণ বেআইনি। আর সংশ্লিষ্ট ট্যাগ কর্মকর্তা উপজেলা একাডেমিক সুপার ভাইজার মো. পারভেজ বলেন, টাকা আদায়ের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাহাত উজ-জামান বলেন, পাটোয়ারীহাট ইউনিয়নে ভিজিডির কার্ডধারীদের মাঝে চাল বিতরণকালে টাকা আদায়ের এমন অভিযোগ তিনি পাননি। ভিজিডির কার্ডধারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

Loading

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *