

মোঃ আসিফ, বিশেষ প্রতিনিধি:
একদিকে নতুন প্রাণের আগমন, অন্যদিকে এক মায়ের চিরবিদায়—দুই বিপরীতমুখী ঘটনার করুণ সাক্ষী হলো গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর এলাকা। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে না-ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন তরুণ গৃহবধূ সোহাগী আক্তার জুই (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সোহাগী আক্তার জুই শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার মাইযারা বাজার সংলগ্ন দুলাল দেওয়ানের মেয়ে। বিয়ের পর থেকে তিনি স্বামী আলমগীর হোসেনের সঙ্গে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর এলাকায় বসবাস করছিলেন।
গর্ভাবস্থার আট মাস তিন সপ্তাহ পার হওয়ার পর হঠাৎ করে জুই শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন। তাকে দ্রুত শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর চিকিৎসকরা জানান—তার পেটে ও পায়ে পানি জমেছে, শ্বাসকষ্ট দিন দিন জটিল হচ্ছে। এ অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত ঢাকায় স্থানান্তরের পরামর্শ দেন তারা।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সোহাগীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে তিনি দুটি ফুটফুটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তবে মাতৃত্বের পূর্ণতা পাওয়ার আগেই, সন্তানদের মুখ ভালোভাবে দেখার সুযোগ না রেখেই, মাত্র ২০ মিনিটের ব্যবধানে ৬টা ৫০ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তার স্বামী, সাংবাদিক আলমগীর হোসেন, এক হৃদয়বিদারক কণ্ঠে বলেন,“জীবনে এমন দিন আসবে ভাবিনি—একসাথে সবচেয়ে আনন্দের এবং সবচেয়ে বেদনার মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। আল্লাহ আমাকে দুটি কন্যাসন্তান দিলেন, কিন্তু নিয়ে গেলেন তাদের মা। আমার জুই আর ফিরে এলো না।”
বর্তমানে নবজাতক দুটি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে (হোম কেয়ার হাসপাতাল) আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে এগোচ্ছে।
সোহাগী আক্তার জুইয়ের অকাল মৃত্যুর খবরে পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সকলে গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করছেন তার হাসিমাখা মুখ, প্রাণবন্ত স্বভাব আর অকাল বিদায়ের নির্মম বাস্তবতা।
সাংবাদিক আলমগীর হোসেন তার সহধর্মিনীর রুহের মাগফিরাত কামনায় সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন। তিনি বলেন, “আল্লাহ যেন আমার স্ত্রীকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন এবং আমাদের পরিবারকে এই শোক সহ্য করার শক্তি দেন—এই দোয়াই সকলের কাছে কাম্য।”এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের শোক নয়, এটি এক হৃদয়বিদারক মানবিক ট্র্যাজেডি—যা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, জীবনের আনন্দের মধ্যেও কতটা গভীর বেদনা লুকিয়ে থাকতে পারে।