

মোঃ শাহজাহান বাশার, স্টাফ রিপোর্টার
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সাম্প্রতিক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে দেখা গেল ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে। শনিবার, ৫ জুলাই, পবিত্র আশুরার আগের দিন তেহরানের ঐতিহাসিক ইমাম খোমেনি মসজিদে আয়োজিত এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত হয়ে দেশবাসীকে চমকে দেন এবং নতুন করে জাতির মনোবল জাগিয়ে তোলেন।
এই অনুষ্ঠানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা দৃশ্যে দেখা যায়, খামেনি মসজিদে প্রবেশ করে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন এবং পাশে থাকা এক ধর্মীয় নেতাকে উৎসাহ দিচ্ছেন দেশাত্মবোধক গান “গাও সেই গান, ও ইরান” পরিবেশনের জন্য, যা ইরান-ইরাক যুদ্ধকালীন সময়ের একটি জনপ্রিয় প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
গত ১৩ জুন শুরু হওয়া ইসরায়েল-ইরান সরাসরি সংঘর্ষের পর খামেনি একাধিকবার ভিডিও বার্তায় জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিলেও জনসম্মুখে উপস্থিত হননি। এতে আন্তর্জাতিক মহলে নানা রকম জল্পনা-কল্পনার জন্ম নেয়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, তিনি হয়তো কোনও গোপন বাংকারে অবস্থান করছেন অথবা অসুস্থ। তবে শনিবারের উপস্থিতি এসব গুজবের অবসান ঘটিয়েছে।
সূত্র মতে, ইসরায়েলের সঙ্গে এই সাম্প্রতিক সংঘর্ষে ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন। এর জবাবে ইরান পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
বিশ্বজুড়ে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে যখন ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র ১২৫টি যুদ্ধবিমানের মাধ্যমে ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়। ইরানের বিচার বিভাগ নিশ্চিত করেছে, এই ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৯০০ জনের বেশি মানুষ।
আয়াতুল্লাহ খামেনির এই জনসম্মুখে আবির্ভাব এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন ইরানজুড়ে চলছে মহররম মাসের শোক পালনের আয়োজন। শিয়া মুসলিমদের কাছে এটি অত্যন্ত আবেগঘন ও গুরুত্বপূর্ণ মাস, যেহেতু এই মাসেই কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর অনুসারীরা শহীদ হন।
খামেনির সরব উপস্থিতি এবং দেশপ্রেমে ভরা বার্তা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে যখন ইরান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, যুদ্ধের ক্ষতি ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে কঠিন সময় পার করছে।
এর আগে গত ২৬ জুন এক রেকর্ডকৃত ভিডিও বার্তায়, খামেনি বলেন,“আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই চাপ প্রয়োগ করুন, ইরান কখনো ইসরায়েলের কাছে মাথা নত করবে না।”এই বক্তব্য ইরানিদের মধ্যে দেশপ্রেম ও প্রতিরোধের বার্তা হিসেবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
আয়াতুল্লাহ খামেনির জনসম্মুখে এই উপস্থিতি শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত রাজনৈতিক বার্তা—যার মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাছে দেখাতে চেয়েছেন যে, ইরান এখনও দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে, নেতৃত্ব অটুট এবং জাতি এখনো প্রতিরোধের পথে।