Dhaka 7:28 am, Tuesday, 14 October 2025

জুলাই সনদে এখনো অনিশ্চয়তা,রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যে পিছিয়ে গেল স্বাক্ষরের তারিখ

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:53:36 am, Monday, 13 October 2025
  • 70 Time View

মো: শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

দীর্ঘ সংলাপ ও আলোচনার পর বহু প্রত্যাশিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও, এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এখনো কাটেনি। ফলে সনদ স্বাক্ষরের নির্ধারিত তারিখ আবারও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সনদ প্রণয়নে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল মৌলিক নীতিমালার বিষয়ে একমত হলেও, বাস্তবায়ন কাঠামো, ক্ষমতার বণ্টন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে তীব্র মতপার্থক্য রয়ে গেছে।কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“সব দলই শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, কিন্তু কে কীভাবে বাস্তবায়ন করবে— সেই প্রশ্নেই সবাই বিভক্ত।”

প্রথমে ১৫ অক্টোবর সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে তা শুক্রবারে পেছানো হয়, যাতে সাধারণ জনগণও উপস্থিত থাকতে পারেন।তবে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তারিখ পরিবর্তনের মূল কারণ জনগণের উপস্থিতি নয়— বরং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর দ্বিধা ও আপত্তি দূর করা।

এক সূত্র বলছে, “আমরা চাই সব দলের স্বাক্ষর থাকুক। কিন্তু কিছু দল এখনো লিখিতভাবে আপত্তি জানাচ্ছে।”দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে প্রণীত ৮৪ দফার জুলাই সনদ-এ প্রতিটি দলের মতামত ও আপত্তির সংক্ষিপ্তসার সংযুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে প্রতিটি দলে একটি করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, “এটি একটি ঐক্যের দলিল, তবে জোর করে কাউকে একমত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই, মতভেদ থাকা সত্ত্বেও সবাই যেন আলোচনার টেবিলে থাকে।”সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্বিধা কমাতে কমিশন বর্তমানে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকেও বসছেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।

সূত্র জানায়, সনদের মূল লক্ষ্য হলো আগামী নির্বাচন ও পরবর্তী সরকারব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, যাতে সংঘাত, অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান ঘটে। গত জুনে শুরু হওয়া সংলাপের মাধ্যমে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রথমবারের মতো একটি সম্মিলিত জাতীয় সনদ প্রণয়নে আগ্রহ দেখায়। তিন মাসের আলোচনার পর জুলাইয়ে প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত হয়, যা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

তবে এখনো কয়েকটি দল সনদের ভাষা ও প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, “সনদের প্রতিশ্রুতি ভালো, কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিষ্কার নয়।”জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করা হবে না। নতুন তারিখ নির্ধারণের আগে কমিশন আবারও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বসবে। কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেন,“এটি শুধুই একটি দলিল নয়, বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি রোডম্যাপ। তাই তাড়াহুড়ো নয়— আমরা চাই সবাই একই প্ল্যাটফর্মে আসুক।”

Tag :
সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল হাসান

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সৈয়দপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ

জুলাই সনদে এখনো অনিশ্চয়তা,রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্যে পিছিয়ে গেল স্বাক্ষরের তারিখ

Update Time : 07:53:36 am, Monday, 13 October 2025

মো: শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

দীর্ঘ সংলাপ ও আলোচনার পর বহু প্রত্যাশিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও, এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য এখনো কাটেনি। ফলে সনদ স্বাক্ষরের নির্ধারিত তারিখ আবারও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সনদ প্রণয়নে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল মৌলিক নীতিমালার বিষয়ে একমত হলেও, বাস্তবায়ন কাঠামো, ক্ষমতার বণ্টন, নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক সংস্কার নিয়ে তীব্র মতপার্থক্য রয়ে গেছে।কমিশনের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“সব দলই শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায়, কিন্তু কে কীভাবে বাস্তবায়ন করবে— সেই প্রশ্নেই সবাই বিভক্ত।”

প্রথমে ১৫ অক্টোবর সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জাতীয় সনদে স্বাক্ষরের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে তা শুক্রবারে পেছানো হয়, যাতে সাধারণ জনগণও উপস্থিত থাকতে পারেন।তবে কমিশন সূত্রে জানা গেছে, তারিখ পরিবর্তনের মূল কারণ জনগণের উপস্থিতি নয়— বরং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে দলগুলোর দ্বিধা ও আপত্তি দূর করা।

এক সূত্র বলছে, “আমরা চাই সব দলের স্বাক্ষর থাকুক। কিন্তু কিছু দল এখনো লিখিতভাবে আপত্তি জানাচ্ছে।”দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে প্রণীত ৮৪ দফার জুলাই সনদ-এ প্রতিটি দলের মতামত ও আপত্তির সংক্ষিপ্তসার সংযুক্ত করা হয়েছে। এ কারণে প্রতিটি দলে একটি করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বা ভিন্নমত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, “এটি একটি ঐক্যের দলিল, তবে জোর করে কাউকে একমত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই, মতভেদ থাকা সত্ত্বেও সবাই যেন আলোচনার টেবিলে থাকে।”সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্বিধা কমাতে কমিশন বর্তমানে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে গোপন বৈঠকেও বসছেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।

সূত্র জানায়, সনদের মূল লক্ষ্য হলো আগামী নির্বাচন ও পরবর্তী সরকারব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য তৈরি করা, যাতে সংঘাত, অবিশ্বাস ও রাজনৈতিক সহিংসতার অবসান ঘটে। গত জুনে শুরু হওয়া সংলাপের মাধ্যমে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রথমবারের মতো একটি সম্মিলিত জাতীয় সনদ প্রণয়নে আগ্রহ দেখায়। তিন মাসের আলোচনার পর জুলাইয়ে প্রাথমিক খসড়া প্রস্তুত হয়, যা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।

তবে এখনো কয়েকটি দল সনদের ভাষা ও প্রয়োগযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। তারা বলছে, “সনদের প্রতিশ্রুতি ভালো, কিন্তু বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিষ্কার নয়।”জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়ন কাঠামো নিয়ে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করা হবে না। নতুন তারিখ নির্ধারণের আগে কমিশন আবারও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বসবে। কমিশনের একজন মুখপাত্র বলেন,“এটি শুধুই একটি দলিল নয়, বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য একটি রোডম্যাপ। তাই তাড়াহুড়ো নয়— আমরা চাই সবাই একই প্ল্যাটফর্মে আসুক।”