
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে ঘিরে দলে ভেতরে তীব্র অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মনোনয়ন পাওয়া ও না–পাওয়া দুই পক্ষ—সাবেক সদস্য সচিব হাজী জসিমউদ্দীন জসিম ও বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম মিজানুর রহমান চেয়ারম্যানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে চলছে উত্তেজনা ও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব হাজী জসিমউদ্দীন জসিমকে মনোনয়ন দেওয়ার ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় দেখা দেয় উত্তেজনা। মনোনয়ন ঘোষণার পর শনিবার (৮ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বিএনপির একদল কর্মী-সমর্থক কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।
বিক্ষোভকারীরা জসিমউদ্দীনের মনোনয়ন বাতিল করে এটিএম মিজানুর রহমানকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানায়। তারা রাস্তায় বসে ‘মনোনয়ন পরিবর্তন চাই’ ও ‘মিজান ভাইয়ের ন্যায়বিচার চাই’—এমন স্লোগান দেন। পরিস্থিতি কিছু সময়ের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, তবে পুলিশের উপস্থিতিতে পরে অবরোধ তুলে নেয়া হয়।
অন্যদিকে, হাজী জসিমউদ্দীনের সমর্থকরা ধানের শীষ প্রতীক হাতে আনন্দ মিছিল বের করে এবং দলের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তারা বলেন, দল যাকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, সেটিই চূড়ান্ত এবং সবাইকে সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।
হাজী জসিমউদ্দীন জসিম সাংবাদিকদের বলেন,“দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, এটা আমার জন্য বড় দায়িত্ব। আমি এই আসনটি বিএনপিকে উপহার দিতে চাই। কর্মীদের মধ্যে আবেগ থাকা স্বাভাবিক—কেউ আমাকে ভালোবাসে, কেউ মিজান ভাইকে। তবে আমরা সবাই একই দলের মানুষ, এই গ্রুপিং খুব শিগগিরই মিটে যাবে।”
অন্যদিকে, বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন,“দল আমাকে মনোনয়ন দেয়নি, এটা দলের সিদ্ধান্ত। আমার কর্মীরা ভালোবাসা থেকে বিক্ষোভ করছে—আমি কাউকে রাস্তায় নামতে বলিনি। আমি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নই।”
স্থানীয় দলীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, মনোনয়ন পরিবর্তনের সম্ভাবনা এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। কিছু কেন্দ্রীয় নেতা এবং শরিক দলের প্রতিনিধিরা এ বিষয়ে পুনর্মূল্যায়নের তদবির চালাচ্ছেন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় রয়েছে, বিএনপির শরিক দল এনসিপি, এবি পার্টি ও নাগরিক ঐক্যের কিছু প্রভাবশালী নেতা এ আসনটি শরিক দলের জন্য বরাদ্দের দাবি তুলেছেন। তারা মনোনয়ন পরিবর্তনের জন্য কেন্দ্রে সক্রিয় তদবির চালাচ্ছেন।
এতে করে কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এক জটিল পরিস্থিতি। যদিও দলীয় নেতৃত্ব বলছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গের কোনো সুযোগ নেই—চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ গেলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই আসনটি কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। অতীতে এই আসনে দলটির ভালো ভোট ব্যাংক থাকলেও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন প্রার্থীর নির্বাচনী সম্ভাবনাকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বুড়িচং–ব্রাহ্মণপাড়া আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব দলের ভবিষ্যৎ নির্বাচনী কৌশলের জন্য বড় সংকেত। একদিকে মনোনয়ন পাওয়া নেতার প্রতি কেন্দ্রীয় আস্থার বার্তা, অন্যদিকে মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের বিভক্ত অবস্থান—দলের ঐক্যকে নড়বড়ে করছে। যদি এই বিভাজন দ্রুত নিরসন না হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের প্রার্থীরা এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এখনই দায়িত্ব, মাঠ পর্যায়ে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেয়া এবং প্রার্থীদের মধ্যকার দূরত্ব দূর করা।
Reporter Name 






















