Dhaka 10:23 am, Tuesday, 14 October 2025

মাদকের ছোবলে আজ বাংলাদেশ আক্রান্ত

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:58:37 am, Monday, 13 October 2025
  • 83 Time View

মো: শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ—একটি তরুণ প্রজন্মের দেশ, যেখানে স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও পরিশ্রমের গল্প প্রতিদিনই নতুনভাবে লেখা হয়।কিন্তু এই দেশের বুকেই নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে এক ভয়ানক ব্যাধি— মাদক।এ যেন ধীরে ধীরে সমাজের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় ছোবল মেরে চলেছে এক অদৃশ্য বিষধর সাপ। একসময় মাদক ছিল সীমিত গোষ্ঠীর বিলাস। এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রাম, কলেজ থেকে ক্লাব, এমনকি গ্রামের চায়ের দোকানেও। ইয়াবা, আইস, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন— নামগুলো আলাদা, কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই— ধ্বংস।

মাদক শুধু একজন মানুষকে নয়, ধ্বংস করে তার পরিবার, সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।আজ যে কিশোরটা হাতে বই রাখার কথা, সে রাখছে সিগারেট কিংবা ইয়াবার ট্যাব।যে যুবক একদিন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল, সে আজ মাদকের নেশায় নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে।মাদকের বিস্তার কেবল ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, এটি এক বিশাল অপরাধচক্রের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য।
সীমান্ত পেরিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার মাদক, আর সেই সঙ্গে দুর্নীতির জালে আটকা পড়ছে প্রশাসনের কিছু অসাধু অংশও।একদিকে চলছে অভিযান, অন্যদিকে নতুন পথে ঢুকছে নতুন মাদক— যেন আগুন নেভাতে গিয়ে আরও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ধোঁয়া।মাদক আজ কেবল অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।কারণ, এক প্রজন্ম যদি ধ্বংস হয়ে যায়— তবে সে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎই হারিয়ে যায়।সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো— সমাজের নীরবতা।একজন সন্তান রাতে দেরিতে বাড়ি ফেরে, চোখ লাল, আচরণ বদলে যায়— কিন্তু বাবা-মা লজ্জায় চুপ থাকেন।

প্রতিবেশী জানে, ওই ছেলেটি মাদকাসক্ত, তবু মুখ খোলে না।এই নীরবতা, এই অবহেলাই মাদককে দিয়েছে সবচেয়ে বড় সুযোগ— গোপনে বেড়ে ওঠার।যেখানে লজ্জা ও ভয় সত্যের চেয়ে বড় হয়, সেখানে মাদক সমাজের অংশ হয়ে ওঠে।যুবসমাজ আজ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট।তারা জানে, তরুণদের হাতেই রয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ— তাই সেই হাতগুলোকে অচল করলেই রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে।ইয়াবার চকচকে ট্যাবলেট, বিদেশি বোতলের ঝলকানি— এসবই তরুণদের কাছে আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে ধ্বংস, হতাশা ও মৃত্যুর হাতছানি।একজন মাদকাসক্ত তরুণের মৃত্যু শুধু তার নয়—এটি একটি পরিবারের মৃত্যু, সমাজের মৃত্যু, জাতির সম্ভাবনার মৃত্যু।সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত অভিযান, আইন, ও সচেতনতা কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।তবুও প্রশ্ন থাকে— কেন মাদক থামছে না?কারণ, মাদককে কেবল আইন দিয়ে বন্ধ করা যায় না;এটি নৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিরোধের মাধ্যমে থামাতে হবে।

শুধু আইন নয়— প্রয়োজন ভালোবাসা, দিকনির্দেশনা ও মানসিক পুনর্বাসন।যে তরুণ একবার ভুল পথে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব—
কারণ সে হারানো মানুষ নয়, সে এখনো জাতির সন্তান।প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি বিদ্যালয়, প্রতিটি মহল্লা হতে হবে একটি সচেতনতার দুর্গ।বাবা-মাকে জানতে হবে সন্তানের বন্ধু কারা, সে কোথায় যায়, কী নিয়ে ব্যস্ত।শিক্ষককে জানতে হবে ছাত্রের চোখের ক্লান্তি বইয়ের নয়, নেশার কি না।সমাজকে বলতে হবে—“আমরা লজ্জায় চুপ থাকব না; আমরা প্রতিবাদ করব।”

কারণ, মাদককে ভয় দেখিয়ে নয়, মানুষ জাগিয়ে রুখতে হবে।বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই অগ্রযাত্রা টেকসই হবে না, যদি এর ভেতরে নেশার আগুন জ্বলে।আমাদের তরুণ প্রজন্মই দেশ গড়ার প্রধান শক্তি—তাদের মাদক নয়, দিতে হবে স্বপ্ন, শিক্ষা ও ভালোবাসা।মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু পুলিশের নয়—এটি আমাদের সবার লড়াই, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই। আজ মাদককে না বলতে হবে — এখনই, এখানেই।

Tag :
সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল হাসান

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে সৈয়দপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ

মাদকের ছোবলে আজ বাংলাদেশ আক্রান্ত

Update Time : 07:58:37 am, Monday, 13 October 2025

মো: শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার

বাংলাদেশ—একটি তরুণ প্রজন্মের দেশ, যেখানে স্বপ্ন, সম্ভাবনা ও পরিশ্রমের গল্প প্রতিদিনই নতুনভাবে লেখা হয়।কিন্তু এই দেশের বুকেই নিঃশব্দে ছড়িয়ে পড়ছে এক ভয়ানক ব্যাধি— মাদক।এ যেন ধীরে ধীরে সমাজের প্রতিটি শিরা-উপশিরায় ছোবল মেরে চলেছে এক অদৃশ্য বিষধর সাপ। একসময় মাদক ছিল সীমিত গোষ্ঠীর বিলাস। এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে শহর থেকে গ্রাম, কলেজ থেকে ক্লাব, এমনকি গ্রামের চায়ের দোকানেও। ইয়াবা, আইস, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন— নামগুলো আলাদা, কিন্তু উদ্দেশ্য একটাই— ধ্বংস।

মাদক শুধু একজন মানুষকে নয়, ধ্বংস করে তার পরিবার, সমাজ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে।আজ যে কিশোরটা হাতে বই রাখার কথা, সে রাখছে সিগারেট কিংবা ইয়াবার ট্যাব।যে যুবক একদিন দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিল, সে আজ মাদকের নেশায় নিজের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে।মাদকের বিস্তার কেবল ব্যক্তিগত দুর্বলতা নয়, এটি এক বিশাল অপরাধচক্রের অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য।
সীমান্ত পেরিয়ে আসছে কোটি কোটি টাকার মাদক, আর সেই সঙ্গে দুর্নীতির জালে আটকা পড়ছে প্রশাসনের কিছু অসাধু অংশও।একদিকে চলছে অভিযান, অন্যদিকে নতুন পথে ঢুকছে নতুন মাদক— যেন আগুন নেভাতে গিয়ে আরও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ধোঁয়া।মাদক আজ কেবল অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে পরিণত হয়েছে।কারণ, এক প্রজন্ম যদি ধ্বংস হয়ে যায়— তবে সে রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎই হারিয়ে যায়।সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় হলো— সমাজের নীরবতা।একজন সন্তান রাতে দেরিতে বাড়ি ফেরে, চোখ লাল, আচরণ বদলে যায়— কিন্তু বাবা-মা লজ্জায় চুপ থাকেন।

প্রতিবেশী জানে, ওই ছেলেটি মাদকাসক্ত, তবু মুখ খোলে না।এই নীরবতা, এই অবহেলাই মাদককে দিয়েছে সবচেয়ে বড় সুযোগ— গোপনে বেড়ে ওঠার।যেখানে লজ্জা ও ভয় সত্যের চেয়ে বড় হয়, সেখানে মাদক সমাজের অংশ হয়ে ওঠে।যুবসমাজ আজ মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট।তারা জানে, তরুণদের হাতেই রয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ— তাই সেই হাতগুলোকে অচল করলেই রাষ্ট্র দুর্বল হয়ে পড়বে।ইয়াবার চকচকে ট্যাবলেট, বিদেশি বোতলের ঝলকানি— এসবই তরুণদের কাছে আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে আছে ধ্বংস, হতাশা ও মৃত্যুর হাতছানি।একজন মাদকাসক্ত তরুণের মৃত্যু শুধু তার নয়—এটি একটি পরিবারের মৃত্যু, সমাজের মৃত্যু, জাতির সম্ভাবনার মৃত্যু।সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত অভিযান, আইন, ও সচেতনতা কার্যক্রম নেওয়া হচ্ছে।তবুও প্রশ্ন থাকে— কেন মাদক থামছে না?কারণ, মাদককে কেবল আইন দিয়ে বন্ধ করা যায় না;এটি নৈতিক, সামাজিক ও পারিবারিক প্রতিরোধের মাধ্যমে থামাতে হবে।

শুধু আইন নয়— প্রয়োজন ভালোবাসা, দিকনির্দেশনা ও মানসিক পুনর্বাসন।যে তরুণ একবার ভুল পথে গেছে, তাকে ফিরিয়ে আনা রাষ্ট্রের দায়িত্ব—
কারণ সে হারানো মানুষ নয়, সে এখনো জাতির সন্তান।প্রতিটি পরিবার, প্রতিটি বিদ্যালয়, প্রতিটি মহল্লা হতে হবে একটি সচেতনতার দুর্গ।বাবা-মাকে জানতে হবে সন্তানের বন্ধু কারা, সে কোথায় যায়, কী নিয়ে ব্যস্ত।শিক্ষককে জানতে হবে ছাত্রের চোখের ক্লান্তি বইয়ের নয়, নেশার কি না।সমাজকে বলতে হবে—“আমরা লজ্জায় চুপ থাকব না; আমরা প্রতিবাদ করব।”

কারণ, মাদককে ভয় দেখিয়ে নয়, মানুষ জাগিয়ে রুখতে হবে।বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই অগ্রযাত্রা টেকসই হবে না, যদি এর ভেতরে নেশার আগুন জ্বলে।আমাদের তরুণ প্রজন্মই দেশ গড়ার প্রধান শক্তি—তাদের মাদক নয়, দিতে হবে স্বপ্ন, শিক্ষা ও ভালোবাসা।মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুধু পুলিশের নয়—এটি আমাদের সবার লড়াই, আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই। আজ মাদককে না বলতে হবে — এখনই, এখানেই।