পুরোনো দিনের জনপ্রিয়তা হারিয়েছে পুরান ঢাকার সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে
আব্দুল্লাহ আল রাকিব, স্টাফ রিপোর্টার
প্রতিবছর ১৪ জানুয়ারি পুরান ঢাকার সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসব সাকরাইন করা হয় । সাকরাইনের অন্যতম প্রধান আকর্ষন ঘুড়ি উৎসব। তবে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবে কমেছে বেচাকেনা। আগেকার গৌরব হারিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়ায় পরিবর্তন এসেছে পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবেও। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরান ঢাকার শাঁখারী বাজার, নারিন্দা, ধোলাইখাল, ধুপখোলা, গেন্ডারিয়াসহ প্রতিটি অলি গলিতে নানা রংয়ের ঘুড়ির পশরা সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। তবে দোকানগুলোতে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার সমাগম নেই। দোকানিরা সাকরাইন উপলক্ষে নানা রংবেরঙের ঘুড়ি-নাটাই ও সুতোর পসরা সাজিয়ে অপেক্ষা করছেন ক্রেতার। শাঁখারি বাজারের দোকানগুলো আকার ও মান ভেদে নানা ধরনের ঘুড়ি দেখা যায়। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ভোয়াদার, চক্ষুদার, দাবাদার, রুমালদার, চিলদার, রকেট, স্টার, টেক্কা, শিংদ্বার, রংধনু, গুরুদার, পান, লাভসহ রয়েছে অসংখ্য ঘুড়ি। আকারভেদে একেকটা ঘুড়ির সর্বমিম্ন দাম ৫, ১০, ১৫, ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের নাটাইয়ের পসরা। যার দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং সুতার দাম হাঁকানো হচ্ছে মান ভেদে ৮০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। যার দাম ১০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা এবং সুতার দাম হাঁকানো হচ্ছে মান ভেদে ৮০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। শাঁখারি বাজারে দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ঘুরি বিক্রি করেন সুদেব শু দত্ত। তাঁর দোকান ভর্তি বাহারি রঙের ঘুড়ির সঙ্গে রয়েছে ছোট-বড় নাটাই ও সুতা। অন্যান্য বছর সময়টা ঘুড়ি বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করলেও এবারের চিত্রটা সম্পন্ন ভিন্ন। আগের মতো বেচাকেনা নেই ঘুড়ি উৎসবে তার দোকানে। দীপ দত্ত নামের দোকানদার বলেন, আগে শাঁখারী বাজারে ১০-১৫ টা ঘুড়ির দোকান ছিল। কিন্তু এখন ২৫ থেকে ৩০ টা দোকান হয়েছে। এছাড়াও সবকিছুর দাম বাড়ায় বেচাকেনা কমেছে। গতবারের চেয়ে এবার আরও খারাপ বেচাকেনা। সেই সাথে পুরো পুরান ঢাকা জুড়ে অলি-গলিতে তরুণরা এখন মোবাইল গেইমে আসক্ত হয়ে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসবের আমেজ ভুলে গেছে। পুরান ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দা রহমতুল্লাহ বলেন, মানুষের মধ্যে ভাতৃত্ব কমে গেছে আগের তুলনায়। এখন নানা জটিলতায় তরুণেরা সাকরাইন উৎসবে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এছাড়াও আধুনিক যুগের ডিজে পার্টি এবং আতশবাজির কারণে সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়েছে। উল্লেখ্য, সাকরাইন মূলত পৌষসংক্রান্তি ঘুড়ি উৎসব। বাংলাদেশে শীত মৌসুমের বাৎসরিক উদযাপনে ঘুড়ি উড়িয়ে পালন করা হয়। সংস্কৃত শব্দ ‘সংক্রান্তি’ ঢাকাইয়া অপভ্রংশে সাকরাইন রূপ নিয়েছে। পৌষ ও মাঘ মাসের সন্ধিক্ষণে, পৌষ মাসের শেষদিন সারা ভারতবর্ষে সংক্রান্তি হিসাবে উদযাপিত হয়। তবে পুরান ঢাকায় পৌষসংক্রান্তি বা সাকরাইন সার্বজনীন ঢাকাইয়া উৎসবের রূপ নিয়েছে। বর্তমানে দিনভর ঘুড়ি উড়ানোর পাশাপাশি সন্ধ্যায় বর্ণিল আতশবাজি ও রঙবেরঙ ফানুশে ছেয়ে যায় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী শহরের আকাশ। এক কথায় বলা যায় সাকরাইন হচ্ছে এক ধরনের ঘুড়ি উৎসব। বাংলা বর্ষপঞ্জিকার নবমতম মাস, ‘পৌষ মাসের শেষ দিনে আয়োজিত হয় যা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জিকার হিসেবে জানুয়ারি মাসের ১৪ অথবা ১৫ তারিখে পড়ে।