বান্দরবান লামা বন বিভাগের বমু রিজার্ভ ফরেস্টের পুকুরিয়াখোলা এলাকায় অবস্থিত বৃহৎ তেলশুর গাছ দুইটি।
কালের সাক্ষী ২০০ বছরের পুরনো তেলশুর গাছ !
মোঃমোরশেদ আলম চৌধুরী বান্দরবান
বান্দরবান জেলা লামা উপজেলা লামা বন বিভাগের আওতাধীন ‘বমু রিজার্ভ ফরেস্ট’ এর পুকুরিয়াখোলা মাঠের উত্তর পাশে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ২০০ বছরের পুরানো দুইটি ‘তেলশুর’ গাছ। বছরের পর বছর গাছ দুইটি নিয়ে এলাকার মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। স্থানীয়দের মাঝে গাছ দুইটি ‘মামা-ভাগিনা’ নামেই পরিচিত।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বমু ফরেস্ট রিজার্ভ ২৫ এপ্রিল ১৯৩১ সালে কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের তত্ত¡াবধানে বমু রিজার্ভ ফরেস্ট সৃজিত হয়। ২০০৫ সালে বমু রিজার্ভ লামা বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সংরক্ষিত ও রক্ষিত মিলে এই রিজার্ভের মোট আয়তন ২০১৯.৭৮ একর। বিভিন্ন মূল্যবান গাছের মাদার ট্রি’র জন্য বমু রিজার্ভ বিখ্যাত। এখানে শতবর্ষী গর্জন, তেলশুর, চাপালিশ, বয়েরা বৈলআম ও রং গামারী মাতৃবৃক্ষ গাছ আছে। এছাড়া ২৫০ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে মূল্যবান আগর বাগান।
জানা যায়, ১৮৯০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে প্রাচীন উপজাতীয় রাজা বমাং মার্মা স্ব-পরিবারে এ এলাকায় বসবাসের মধ্য দিয়ে তার নামানুসারে বমু ও চতুর্পাশে সবুজ পাহাড় ঘেরা সমতল ভ‚মির বিল বিধায় বিলছড়ি নামকরণ করা হয়েছে। তারও শতবছর আগে থেকে মাতামুহুরী নদীকে ঘিরে এই অঞ্চলে গড়ে উঠে মানববসতি। সেইসময় থেকে প্রাকৃতিকভাবে পুরানো এই গাছ গুলো বেড়ে উঠে। বমু রিজার্ভ ফরেস্টে তেলশুর সহ দেড়শত বছরের চেয়েও পুরানো শতাধিক মাদারট্রি রয়েছে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) চট্টগ্রামের বন উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অসীম কুমার পাল বলেন, বমু রিজার্ভ ফরেস্ট নিয়ে শীঘ্রই আমরা কিছু রিসার্চ করব। প্রায় ২০০ বছর বয়সী, ২২ ফুট চওড়া ও ১৮০ ফুট উচ্চতার তেলশুর গাছটি একটি ‘বিরল গাছ’। তেলশুর ভালো মানের কাঠের জন্য বিখ্যাত। গড়ে এই গাছ ২০০ থেকে ২৫০ বছর বাঁচে। ‘আমরা গাছের গুণগত মান, ওষুধি গুণ এবং চারা তৈরির বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করব।
লামা বন বিভাগের বমু রিজার্ভ ফরেস্টের পুকুরিয়াখোলা এলাকায় অবস্থিত বৃহৎ তেলশুর গাছ দুইটি।
তিনি আরো বলেন, তেলশুর পরিবারের গণের একটি বড় আধা-পর্ণমোচী গাছ। যার গড় উচ্চতা সাধারণত ২৫-৩০ মিটার। তেলশুর বনের একটি ভালো কাঠের গাছ, যা চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটে পাওয়া যায়। গাছটির আদি নিবাস দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। গাছটি কাঠের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, ভবন নির্মাণের জন্য উপযুক্ত। এর ইংরেজি নাম: Telshur or White thingan, বৈজ্ঞানিক নাম: Hopea odorata,
গাছটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রয়েছে বান্দরবান জেলার ‘লামা বন বিভাগ’। লামা বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আরিফুল হক বেলাল বলেন, ‘দেশে দুইশতবর্ষী গাছের সংখ্যা খুব কম। এদিক থেকে এ গাছ দুইটির গুরুত্ব অনেক। চট্টগ্রাম বিভাগে এরচেয়ে বড় তেলশুর গাছ আর নেই। গাছটি ঘিরে মানুষের একটু বাড়তি আগ্রহ খারাপ কিছু না। বরং গাছটিকে টিকিয়ে রাখতে এটি বেশ কাজে দেবে।
পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, তেলশুরের কান্ড সরল, দীর্ঘ ও গোলাকৃতির। বাকলের রঙ গাঢ় ধূসর এবং অজস্র ফাটলে রুক্ষ হয়ে থাকে। সবুজ রঙের খানিকটা সরু পাতাগুলো ডালের আগায় গুচ্ছবদ্ধভাবে ঝুলে থাকে। পাতা গুলো লম্বা ও সম্পূর্ণ পাতার মার্জি সহ ডিম্বাকার। পরিপক্ক পাতার রঙ সবুজ। এই গাছের শাখাগুলো ঊর্ধ্বমুখী হলেও প্রশাখাগুলো বেশ নোয়ানো ধরনের। শীতের শুরুতে গাছের সব পাতা ঝরে পড়ে। তখন গাছ একেবারে রিক্ত, নিঃস্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বসন্তের প্রথম দিকেই অসংখ্য কচিপাতার সবুজে ভরে ওঠে গাছ। একই সময়ে ফুলগুলোও ফুটতে শুরু করে। ফুলের রং ম্লান হলুদ। এই ফুল সুগন্ধি হওয়ায় পুষ্পিত বীথির সান্নিধ্য বেশ লোভনীয়। ফুল কঝরে পড়ার পরপরই অসংখ্য ফলে ভরে ওঠে গাছ। কাঁচা ফলের রঙ সবুজ, পরিণত ফল দেখতে বাদামি রঙের। বর্ষার প্রথমভাগে ফলের ভারে নুয়ে পড়া গাছ বেশ সুদৃশ্য হয়ে ওঠে। ফল গোলাকার, লম্বাটে এবং ফলের পরিমাপ প্রায় ৬-৫ মিমি। এটির ২টি লম্বা ডানা এবং ৩টি ছোট ডানা রয়েছে যা বাতাসের মাধ্যমে বীজ ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে।
বমু ফরেস্ট রিজার্ভের বিট কর্মকর্তা অঞ্জন কান্তি বিশ্বাস বলেন, প্রায়সময় গাছটি আমরা দেখতে যাই। কালের স্বাক্ষী গাছ দুইটি নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মাঝে অনেক লোককথা আছে। ওই এলাকার মুরুব্বি নুরুল আমিন, আনোয়ার হোসেন ও মিজান জানান এই অঞ্চলে এতবড় গাছ আর নেই। এই দুইটি গাছের মধ্যে পূর্বপাশের বড় গাছটি মামা নামে আখ্যায়িত ও পশ্চিমপাশের একটু ছোট গাছটি ভাগিনা নামে পরিচিত। ৮৫ বছর বয়সী নুরুল আমিন বলেন, ছোট বেলার এই তেলশুর গাছের নিচে গরু ছাগল চড়াতাম। তখনও গাছটি এতবড় দেখেছি। এই গাছের ২০ ফুট পশ্চিমে আরো একটি পুরানো তেলশুর গাছ আছে। সেটি আরো ছোট।
এ প্রসঙ্গে বমু বিলছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল কাদের বলেন, ‘গাছটি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে প্রচুর কৌতূহল আছে। এলাকার সবাই এটিকে ‘মামা-ভাগিনা’ গাছ নামেই চেনে। এটির বয়স হবে প্রায় ২০০ বছর
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।