রবিবার , ৭ই জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ১লা মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ সুরক্ষা দেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে

প্রকাশিত হয়েছে- সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪
উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ সুরক্ষা দেয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে
এফ এম এ রাজ্জাক, পাইকগাছা (খুলনা)
প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূল অঞ্চলের মানুষের ভরসা করে উপকুলীয় বেড়িবাধ বাঁধ ভালো থাকলে তারা দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে। আর বাঁধ ভেঙে গেলে তাদের ঘরবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, রাস্তাসহ সবকিছু পানিতে ভেসে যায়। নিচে হয়ে পড়ে মানুষ। ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল  ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল যা জঙ্গল, সমতলসহ বিভিন্ন পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ইন্টারফেসের সমন্বয়ে গঠিত। উপকূলীয় বাসিন্দাদের বেশিরভাগই দরিদ্র এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানবসৃষ্ট বিপদ উভসংস্পর্শে রয়েছে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালি, ঝালকাঠি, বরগুনা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং বাগেরহাট জেলার বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সমুদ্র উপকূলীয় বেড়িবাধ প্রকল্প যা সিইপি। বাঁধ নির্মাণ এবং পানি নিষ্কাশনে এই প্রকল্পে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয় সুইস গেইট বা জলকপাট দারা। সেইসঙ্গে পানি অপসারণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থাও এখানে রয়েছে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত। ১৯৬১ থেকে ১৯৭৮ সালের মধ্যে দুই পর্বে এটি বাস্তবায়ন করা হয়। প্রথম পর্বে প্রকল্পভুক্ত ছিল ৯২টি পোল্ডার নির্মাণ, যার মাধ্যমে ১০ লাখ হেক্টর ভূমি প্রকল্প সুবিধার আওতায় আসে। পোল্ডার একটি ডাস শব্দ, যার অর্থ বন্যা নিয়েবের জন্য নির্মিত মাটির দীর্ঘ বাঁধ (ডাইক) দ্বারা বেষ্টিত এলাকা দ্বিতীয় পর্বে ১৬টি পোল্ডারে আরো চার লাখ হেক্টর ভূমি উদ্ধার সম্ভব হয়। সিইপির আওতায় এ পর্যন্ত ৪,০০০ কিলোমিটারের অধিক দীর্ঘ বেড়িবাঁধ  এবং ১.০৩৯টি নিষ্কাশন জলকপাট বা সুইস গেইট নির্মিত হয়েছে।
সব ধরনের ডাইক বেড়িবাধ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। সমুদ্র ডাইকগুলো মূলত বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকায় সমুদ্রের মুখে অথবা প্রশস্ত  নদীগুলির তীরে অবস্থিত। এসব স্থানে  উঁচু ঢেউরাজি মোকাবিলায় এই বাঁধগুলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে ইতিবাচক ভূমিকার পাশাপাশি এসব বাঁধ সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয়, যা উপকূলীয় অঞ্চলের সার্বিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গতিশীলতার সঞ্চার করেছে। বেড়িবাঁধ জোয়ারের পানি থেকে ভূমিকে রক্ষা করতে কার্যকর, কিন্তু বাঁধের উচ্চতা ছাড়িয়ে যাওয়া জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ার জলোচ্ছ্বাসের অন্যক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে না।
ঘূর্ণিঝড়ের পর ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী দেশের ৩৩ উপজেলাকে সাগর- সংলগ্ন বিপৎসংকুল এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সরকার। এ সব উপজেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম না হওয়ায় ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। ঘূর্ণিদুর্গত এলাকাসমূহে এখনো নির্মিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার। বছরের পর বছর ধরে ভেড়িবাধ গুলোও পুরোপুরি সংস্কার করা হয় নি। উপকূলীয় পোল্ডার গুলো অনেক পুরনো, বেশিরভাগেরই বয়স ৫০-৬০ বছরের বেশি। এগুলো মাটির তৈরি এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। উপরন্তু চিংড়ি চাষের জন্য ঘের মালিকরা লবণপানি ঢোকানোর জন্য যত্রতত্র বাঁধের ভেতরে ছিদ্র করা বা পাইপ বসানোর ফলে এগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। ফলে পোল্ডারগুলোর অসাভাবিক জোয়ার কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের সময় জলোচ্ছ্বাস ঠেকানোর ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। উপকূলের ভেড়িবাধ গুলো সংস্কার, উঁচু করা,  ঘের মালিক দারা বাধ ছিদ্র না  করা বা পাইপ বা বাক্স কল নির্মাণ করে লোনা পানি তোলা বন্ধ করা ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং পুরনো বাঁদ-সংস্কার প্রয়োজন। তা হলে উপকূলীয় অঞ্চল ও এসব অঞ্চলের মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাবে।