মঙ্গলবার , ২রা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ১৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - বর্ষাকাল || ২৬শে জিলহজ, ১৪৪৫ হিজরি

একজনের রেলের চাকরি ,অন্যজন করছেন 

প্রকাশিত হয়েছে- শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪

একজনের রেলের চাকরি ,অন্যজন করছেন

স্টাফ রিপোর্টার

রেলওয়ের ওয়েম্যান পদে চাকরি করেন শ্যামলী বেগম। কিন্তু তিনি কাজে যান না। তাঁর হয়ে চাকরির কাজ করছেন ইলিয়াস মিয়া। বিনিময়ে শ্যামলী নিজের বেতন থেকে ইলিয়াসকে ১৩ হাজার টাকা দিচ্ছেন।

আর চাকরি না করেও সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা শ্যামলী ভোগ করছেন। বাংলাদেশ রেলওয়েতে একজনের চাকরি অন্যজন করছেন—এমন ছয়জনের খোঁজ পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে মো. মহীউদ্দিনের পরিবর্তে চাকরি করছেন শাহ আলম মিয়া। মো. আফরান হোসেনের চাকরি করছেন আমিনুল ইসলাম।
ফেরদৌসী খাতুনের জায়গায় কাজ করছেন ফারুখ হোসেন। বিপাশা আহমেদের পরিবর্তে মুসা মিয়া চাকরি করছেন। তবে মফিজুল ইসলাম এবং শিখা রানীর জায়গায় অন্য দুজন চাকরি করছেন বলে তাঁদের সহকর্মীরা জানিয়েছেন।  প্রশ্ন রাখা হয়, তাঁর চাকরি অন্য কেউ করেন কি না।
জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।’ ইলিয়াস মিয়া অবশ্য স্বীকার করেছেন, তিনি শ্যামলী বেগমের জায়গায় চাকরি করছেন। তিনি বলেন, ‘আগে বিমানবন্দরে কাজ করতাম, এখন কমলাপুরে করি। আপা (শ্যামলী) তো কাজ করেন না। আপা কোয়ার্টারে থাকেন। উনি আমারে ১৩ হাজার টাকা দেন।
ইলিয়াস শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির একটি ঘরে চার হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকেন। শ্যামলী বেগম থাকছেন সরকারি কোয়ার্টারে। রেলওয়ে সূত্র বলছে, রেলের গেটম্যান, পয়েন্টম্যান ও ওয়েম্যানের মতো কাজে একজনের চাকরি অন্যজন করার ঘটনা বেশি।

রেলপথ মন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম  বলেন, ‘এমন হতে পারে, এটা আমার ধারণায় ছিল না। ব্যক্তি যেই হোক, একজনের চাকরি অন্যজন করবে—এটা মেনে নেওয়া হবে না। যাকে যে পদে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাকে সেখানেই কাজ করতে হবে। প্রক্সির প্রমাণ পেলে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

চাকরি রেললাইনে, কাজ করছেন দপ্তরে

ইকবাল হোসেন ২০১৬ সাল থেকে ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে কাজ করছেন। কিন্তু ২০১৪ সালে পাবলিক ওয়ার্কসের (পিডাব্লিউ) অধীনে ওয়েম্যান পদে তাঁর নিয়োগ হয়। যেখানে তাঁর মাঠে থাকার কথা, সেখানে প্রায় আট বছর ধরে তিনি কাজ করছেন দপ্তরে।

গত ১৯ মার্চ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের দপ্তরে গিয়ে ইকবাল হোসেনকে কম্পিউটার অপারেটরের কাজে দেখা যায়। পরে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, দপ্তরে জনবল সংকটের কারণে তিনি এখানে কাজ করছেন। থাকার জন্য শাহজাহানপুরের ‘এ টাইপ’ কলোনি বরাদ্দ পেয়েছেন।

ওয়েম্যানের পদে থেকে ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে কাজ করা অন্য চারজন হলেন সৈয়দ আলী আকবর, সোহেল মিয়া, রুমা আক্তার ও সালমা বেগম। তাঁরা ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলীর দপ্তর ও ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের দপ্তরে কাজ করছেন।

রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, এমন ঘটনা আগে অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এখন এসব কমিয়ে আনা হয়েছে। জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে অনেক কর্মকর্তা এসব প্রশ্রয় দেন। এত নিচের খোঁজ সব সময় ওপর থেকে পাওয়া যায় না। তবে এসব ঘটনাকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।