শুক্রবার , ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ || ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ - গ্রীষ্মকাল || ৯ই জিলকদ, ১৪৪৫ হিজরি

পাইকগাছায় খাদ্যের প্রকট অভাবে মহিষ পালন বিলুপ্তির পথে

প্রকাশিত হয়েছে- শনিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৪
এফ এম এ রাজ্জাক পাইকগাছা (খুলনা) –পাইকগাছায় হারিয়ে যেতে বসছে ঐতিহ্যের মহিষ পালন। সময়ের পরিবর্তনে এখন আর চোখেই পড়ে না মহিষ পালন। দলবেঁধে ঘুরতে দেখা যায়না বিলে। বর্ষা মৌসুমে হালচাষে নেই মহিষের উপস্থিতি। দুধ আর মাংসের জন্য বিখ্যাত হলেও এখন আর নেই  এসবের সহজলভ্যতা। একটা সময় গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে পারিবারিক খামারে মহিষ পালন দেখা যেত। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বিলে খালে তাকালে  দেখা যেত মহিষের পাল। দল বেঁধে খাওয়া আর বিলকে মাতিয়ে রাখাই ছিল মহিষের কাজ। গ্রামের মধ্যে যাদের জমি বেশি থাকত তাদের মহিষও বেশি থাকত। মহিষের দুধ আর মাংসের জন্য লালন-পালন করত তখনকার কৃষকেরা। হালচাষের জন্য ছিল মহিষের আলাদা কদর। তথ্য সূত্রে জানা যায়, পাইকগাছার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে বাপ-দাদার পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। তাদের রয়েছে ২/৪ টি করে মহিষ।একদিকে মহিষের খাদ্য সংকট অন্যদিকে গ্রামগঞ্জের খাল গুলোতে পানি না থাকায় একেবারে হারিয়ে যেতে বসেছে মহিষ পালন।
পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে,  একটা সময় খালে বিলে মহিষ ছেড়ে দিয়ে লালন পালন করতাে মহিষ। পুরো খালে বিলে পানি আর ঘাসে পরিপূর্ণ থাকত। রোগ বালাই কম হত। বিশেষ করে হালচাল করার প্রধান মাধ্যম ছিল মহিষ। সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত টানা হাল চাষ করা যেত। তখনকার সময় পাওয়ার টিলার ছিলো না। খরচ লাগত কম হালচাষে। এখন আর মহিষ দিয়ে কেউ হালচাষ করেনা। যারা মহিষ লালন পালন করে তারা এখন তারা খুব কষ্টে আছে । খাবার, পানি, চিকিৎসা সব মিলিয়েই সংকট। হয়ত কয়েক বছর পর কেউ মহিষ পালন করবে না।
কপিলমুনি ইউনিয়নের রেজাকপুর গ্রামের বাসিন্দা মো.লেয়াকাত আলী বলেন, আমাদের একটা সময় ২০ থেকে ৩০ টি মহিষ ছিল। এ গ্রামে অনেকেই মহিষ পালন করত। এখন আমাদের পরিবারে মহিষ দূরের কথা কনো গরু ও নেই  । খাবার, পানির অভাবের কারণে গরু, মহিষ পালন করা যায় না। মহিষের খাবার কিনে খাওয়ানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন ২ মণ খাবার ও ১মণ পানির প্রয়োজন হয়। এখন আর মহিষ দিয়ে হাল চাষ হয়না। সব মিলিয়ে বিলুপ্ত প্রায় এ মহিষ জাতটি। চাদঁখালী ইউনিয়ন ফতেপুর  গ্রামের বাসিন্দা সবুজ বলেন, এখন রোগ বালাই হয় অনেক। বিশেষ করে খাবার সংকটের কারনেই মহিষ পালন করা কষ্ট সাধ্য। আগে বিল বাওড় খোলা ছিল। ইচ্ছে মত মহিষ ছেড়ে দিতাম। এখন খালে বিলে মৎস লিজ ঘের ও লোনাপানির মাছ চাষ হয়। সেখানে গরু,মহিষ নামতে দেয় না।  তাই আগের মত পানি ও ঘাস না থাকার কারণে আমরা মহিষ পালন ছেড়ে দিয়েছি।
একই এলাকার বাসিন্দা হানিফ মোড়ল বলেন, মহিষ পালনে লাভবান হওয়া যায়। একটা ১বছর বয়সি মহিষের বাচ্চা ৫০-৬০ হাজার টাকায় বিক্রি সম্ভব। প্রতিদিন ৫-৬ কেজি দুধ দোহন করা সম্ভব। একটা মহিষ জবাই করলে প্রায় ৬ মণ গোসত মেলে এসবের পরও কিন্তু খাবার, ওষুধ ও পানির সংকটে অনেক কৃষক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মহিষ পালন থেকে ।
পাইকগাছার পশু চিকিৎসক জানান, গড়ইখালী ইউনিয়নে  হাতে গোনা ৩/৪টা পরিবারে দেখা যায় মহিষ পালন। তবে খাদ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য হলে আগ্রহ বাড়ত কৃষকদের।