ষ্টাফ রিপোর্টার– যাশোরের মনিরামপুর গোপালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. রেজাউল করিমসহ এ প্রতিষ্ঠানের সকল জিবি সদস্য, শিক্ষক ও কর্মচারীরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ৪ এপ্রিল দুপুরে প্রেসক্লাব যাশোরে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়।
লিখিত বক্তবে অধ্যক্ষ মো. রেজাউল করিম বলেন, বিগত ৩০ মার্চ দ্বাদশ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী সাবিনা সুলতানা মানবিক -৪০৬ পরীক্ষায় নকল করে কক্ষ পরিদর্শকদের নিকট ধরা পড়ে কক্ষে কিছুক্ষণ অবস্থান করে রাগান্বিত হয়ে কক্ষ ত্যাগ করে। ঐ দিনই সে তার নিজ বাড়িতে গিয়ে একটি সুইসাইড নোট লিখে আত্নহত্যা করে। খবর পেয়ে তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিষ্ঠানের পিয়ন পাঠিয়ে তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করি এবং স্থানীয় পরিচিতজনদের সাথে কথা বলি। শিক্ষক কর্মচারীদের নিয়ে সেখানে যেতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিনিধি ও স্থানীয়ভাবে সেখানে না যাওয়ার জন্য বলে। তাৎক্ষনিকভাবে তাদের বাড়িতে না যাওয়াটা আমার ভুল ছিল তবে পরবর্তীতে আমি (অধ্যক্ষ) যশোর সদর হাসপাতাল মর্গে যায় এবং তাদের পক্ষে আগত আপনজনদের সাথে কথা বলি, একদিন পর তাদের বাড়িতে যাই। এক ঘন্টা যাবৎ অবস্থান করে পরিবারের সাথে কথা বলি। তাদের বাড়িতেই ইফতার করে, মাগরীবের নামাজ আদায় করে পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে ০৩ তারিখে বিভাগীয় তদন্ত কাজে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিষ্ঠানে আসার আমন্ত্রন জানিয়ে সঙ্গীয় শিক্ষককে নিয়ে বিদায় নিই। প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে এত কিছু করার পরও সেটির দায়ভার স্থানীয় একটি স্বার্থনেষী মহল তাদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য একটি মিথ্যা গল্প বানিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের নামে প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। বিষয়গুলি বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা টেলিফোন বার্তায় পরিচালক মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা খুলনা অঞ্চল কে অবহিত করেন। পরিচালকের কার্যালয় খুলনার স্মারক পত্র নং-৩৭.০২.৪৭০০.০০০.০১.০০১.১৭/
১ এপ্রিল তিন সদস্যের একটি তদন্ত দল যথাক্রমে ১) জেলা শিক্ষা অফিসার, যশোর, ২) উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, মনিরামপুর, ৩) উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার (অনুপস্থিত) ৩ এপ্রিল সকাল ১১ টার দিকে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেন।
তদন্ত প্রায় শেষের দিকে এ কার্যক্রমকে নস্যাৎ করতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে অবস্থানরত কর্মকর্তাদের উপর আকস্মিকভাবে মুখোশধারী কিছু মহিলা ও পুরুষ সব মিলিয়ে ৬০/৭০ জন সন্ত্রাসীরা হকিস্টিক, কাঠ ও বাঁশের লাঠি, ছুরি, চাকু এবং ধারালো অস্ত্রপাতি নিয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও শিক্ষক কর্মচারীদের মারপিট করে হতাহত করে এবং অধ্যক্ষের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে অধ্যক্ষ (আমি নিজে) মোবাইল ফোনে মনিরামপুর থানা, নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ি এবং ৯৯৯ এ যোগাযোগ করি। দেরিতে হলেও প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর অধিকাংশই প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গন ত্যাগ করে। পুলিশের উপস্থিতিতে ভীত সন্ত্রস্ত তদন্তদল অধ্যক্ষের কক্ষ ত্যাগ করে তাদের নিজস্ব গাড়ি নিয়ে প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন।
এই সন্ত্রাসী হামলার নৈপথ্যে কাজ করছে মনিরামপুরের জাতীয় সংসদ সদস্য এস এম ইয়াকুব আলীর ভাই ওয়ালিউর রহমান, ১৩ নং খানপুর ইউনিয়নের ক্যাডার মোঃ আবুল কালাম আজাদ মিলন। এটির কারন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৪/৫ দিন পর মিলন আমাকে (অধ্যক্ষ) বলেছিলেন প্রতিষ্ঠানের চলমান কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করে তাকে সভাপতি বানাতে হবে। (যা ছিল সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূত) এবং তৎপরবর্তী ১৩ নং খানপুর ইউনিয়নে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের সংবর্ধনার নামে ৩০,০০০ টাকা চাদা দাবি করেছিলেন।
পরবর্তী সপ্তাহে ১১ নং চালুয়াহাটি ইউনিয়নে নেংগুড়াহাট স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে একই ব্যক্তির সংবর্ধনার নামে তাদের মনোনীত প্রতিনিধির মাধ্যমে অধ্যক্ষের নিকট ৩০,০০০ টাকা চাদা দাবী করেছিলেন।
অধ্যক্ষ বলেন, এই বিষয়টি আমি নিজে এমপির ভাই মোঃ ওয়ালিউর রহমানকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে তিনি আমার উপরে ক্ষিপ্ত হয়ে উল্লিখিত বিষয়গুলি তার জানা নাই বলেন। আমি তাকে বিষয়গুলি জানার অনুরোধ করলে তিনি আরও বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।
৩ এপ্রিল কলেজে বিভাগীয় তদন্ত চলাকালীন সময়ের যে অতর্কিত সন্ত্রাসী হামলা এটি উপরে বর্ণিত ঘটনারই ফল বলে আমি মনে করি। সন্ত্রাসী হামলায় আমার শিক্ষক কর্মচারীদের অধিকাংশই হতাহত হয়ে ভীত সন্তস্ত্র ও নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেন। অবস্থার প্রেক্ষিতে তারা তাৎক্ষনিকভাবে নিম্নরুপ মানবিক দাবি করেন।
১) সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের এবং তাদের নৈপথ্যের গডফাদারদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। ২) শিক্ষা দপ্তরকে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। ৩) গভর্নিং বডি, স্থানীয় সুধী এবং অভিভাবকমন্ডলী সম্মিলিতভাবে শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও কোন শিক্ষক কর্মচারী আর প্রতিষ্ঠানে যাবেন না। ৪) মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গিকার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সন্ত্রাস মুক্ত করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ হলেন
প্রভাষক চিন্ময় কুমার কুন্ডু, মো: ফজলুর রহমান, মো: ইসরাইল হোসেন, খাদিজা খাতুন, কিংকর কুমার দাশ, মোঃ শামীম আজাদ, সুব্রত শীল, ফাতেমা খাতুন, মো: মিজানুর রহমান, প্রণব কুমার কর্মকার, মোঃ শরিফুল ইসলাম, তাসলিমা খাতুন, সুজন দাশ, ভবনাথ দাশ, মো: রাজিব হোসেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পলাশ কুমার ঘোষ, সহকারী শিক্ষক মদন মোহন হালদার, কাঞ্চন কুমার ঘোষাল, রীনা রানী চৌধুরী, মাওঃ আবু সাঈদ, মাওঃ আবু সাঈদ, আসাদুজ্জামান, সুষমা চক্রবর্ত্তী, মোঃ কামরুজ্জামান, মোঃ আব্দুল মান্নান, চম্পা রানী পাল, বরুন বিশ্বাস, মোঃ মাসুদ করিম, মোঃ আসাদুজ্জামান, দেবযানী রানী ভট্টাচার্য্য, রাবেয়া আক্তার, কম্পিঃ ল্যাব অপারেটর অমিত ঘোষ, অফিস সহঃ কাম হিসাব সহকারী শ্যামল হালদার, নিরাপত্তা কর্মী মোঃ নওয়াব আলী, অফিস সহায়ক মোঃ এরশাদ আলী, মোঃ সোহেল রানা, আয়া কাকলী রানী গাইন, অফিস সহঃ কাম-কম্পিঃ অপারেটর মো: হাবিল উদ্দীন।