সাতক্ষীরার ২৭ বছরেও বিচার হয়নি দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স. ম আলাউদ্দীন হত্যা মামলার
মোঃ শাহিনুর রহমান শাহিন, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক, আওয়ামী লীগ নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ স. ম আলাউদ্দীনের ২৮তম শাহাদতবার্ষিকী ১৯ জুন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে দৈনিক পত্রদূত অফিসে কর্মরত অবস্থায় ঘাতকদের গুলিতে নিহত হন তিনি। দীর্ঘ ২৭ বছর অতিবাহিত হলেও আজও এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার বিচার পায়নি তার পরিবার, বিচার পায়নি সাতক্ষীরাবাসী।
এদিকে, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক, সাবেক এমসিএ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শহিদ স. ম আলাউদ্দীনের ২৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিভিন্ন সংগঠন।
এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আলোচনা সভা, মরহুমের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন, কোরআন খানি ও দোয়া অনুষ্ঠান।
এছাড়া আগামী ৮ জুলাই শহিদ স. ম আলাউদ্দীনের ২৮তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধা-প্রজন্ম সমাবেশ আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, ১৯৯৬ সালের ১৯ জুন সাতক্ষীরা সদর থানার প্রাচীর সংলগ্ন দৈনিক পত্রদূত এর তৎকালীন অফিসে কর্মরত অবস্থায় ঘাতকের গুলিতে প্রাণ হারান আজীবন সংগ্রামী বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীন। এ ঘটনায় নিহতের ভাই স. ম নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ৬ মে সিআইডি’র খুলনা জোনের এএসপি খন্দকার ইকবাল হোসেন এ হত্যা মামলায় সাতক্ষীরার চিহ্নিত সন্ত্রাসী গডফাদারসহ ১০ জনের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন, সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুরের গোলাম খায়বার সরদারের ছেলে সাইফুল ইসলাম ওরফে কিসলু, তার দুই ভাই মোঃ খলিলুল্লাহ ওরফে ঝড়– ও মোমিনউল্লা মোহন, আলিপুরের আব্দুস ছাত্তারের ছেলে আব্দুস সবুর, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নাটয়াররড গ্রামের গোপাল রহমানের ছেলে আতিয়ার রহমান, শহরের সুলতানপুরের মৃত কাজী আব্দুল ওহাবের ছেলে কাজী সাইফুল ইসলাম, তালার নগরঘাটার মৃত শামসুদ্দিন সরদারের ছেলে মো: আব্দুর রউফ, সাতক্ষীরা শহরের প্রাণ সায়র এলাকার মৃত তোফাজদ্দিন সরদারের ছেলে শফিউর রহমান, শহরের সুলতানপুরের মৃত শেখ নুরুল ইসলামের ছেলে এস্কেন ও শহরের কামালনগরের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে কালাম।
চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার প্রভাবশালী আসামি আব্দুস সবুর ও খলিলুল্লাহ ঝড়–সহ কয়েকজন ১৯৯৯ সালের ২৬ জুলাই সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে আদালত তাদের আবেদন নামঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আসামিদের আজ্ঞাবহ সন্ত্রাসীরা সাতক্ষীরা আদালত ঘেরাও করে এবং সাতক্ষীরা জজ কোর্টের সকল বিচারককে ৬ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখে। পরবর্তীতে আসামি আব্দুস সবুর ও খলিলুল্লাহ ঝড়–সহ উক্ত আসামিরা হাইকোর্টে কোয়াশমেন্ট করে। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আ্যাপিলেট ডিভিশন ঐ আদেশ খারিজ করেন। পরবর্তীতে আসামি আব্দুস সবুর, খলিলুল্লাহ ঝড়–সহ উক্ত আসামিরা সাতক্ষীরার কোনো আদালতে এই মামলার ন্যায় বিচার পাবেন না উল্লেখ করে অন্য কোনো জেলায় মামলাটি স্থানান্তরের আবেদন জানালে বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়। হাইকোর্ট ও পরে অ্যাপিলেট ডিভিশনে ঐ আবেদন না মঞ্জুর হলে দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০১১ সালে সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হয় এবং প্রায় ২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
একপর্যায়ে ২০১৮ সালের শেষের দিকে মামলার তৎকালীন সংশ্লিষ্ট বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে বাদী পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম পুনরায় ৬ মাসের জন্য স্থগিত হয়। ইতোমধ্যে সে স্থগিতাদেশের মেয়াদ শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য, স. ম আলাউদ্দীন হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১০জন আসামির মধ্যে অন্য একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ও অসংখ্য মামলার আসামি সাইফুল্লা কিসলু ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে। তার ম্যানেজার আতিয়ার রহমান হত্যাকান্ডের পর থেকে এখনো পলাতক রয়েছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত কাটা রাইফেলসহ গ্রেফতারকৃত আসামি সাইফুল ইসলাম যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অবস্থায় জামিনে মুক্ত রয়েছে। অপর আসামি আব্দুর রউফও একটি হত্যা মামলায় সাজা খেটে কয়েক বছর আগে জেল থেকে বের হয়েছে। আসামি এসকেন পালিয়ে বিদেশে চলে গেলেও কয়েক বছর পূর্বে দেশে ফিরে এই হত্যা মামলায় কয়েকদিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। অপর একটি হত্যা মামলায় সাজা খেটে বর্তমানে এই হত্যা মামলায় জামিনে রয়েছে আসামি শফিউল ইসলাম। তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আবুল কালাম, মোমিন উল্লাহ মোহন, শীর্ষ সন্ত্রাসী গডফাদার হিসেবে পরিচিত আব্দুস সবুর ও খলিলউল্লাহ ঝড়– জামিনে রয়েছে।
কিন্তু বিচারের বাণী কাদছে নীরবে নিভৃতে!
আধুনিক সাতক্ষীরার স্বপ্নদ্রষ্টা মুক্তিযুদ্ধের অকুতোভয় এই বীর সেনানী সাতক্ষীরার তালার উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মিঠাবাড়ি গ্রামে ১৯৪৫ সালের ২৯ আগস্ট (বাংলা ১৩৫২ সালের ১৫ ভাদ্র) জন্মগ্রহণ করেন।
স. ম আলাউদ্দীন গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষে সরুলিয়া হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ১৯৬২ সালে তিনি কলারোয়া হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন, ১৯৬৪ সালে সাতক্ষীরা কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৬৭ সালে দৌলতপুর বিএল কলেজ থেকে বিএ ও ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলা সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬২ সালে হামাদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বাতিলের আন্দোলনের মধ্যদিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে আগমন করেন তিনি। ১৯৬৫-৬৮ পর্যন্ত খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। এসময় আন্দোলন সংগ্রামের কারণে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার গ্রেফতারী পরোয়ানা ও একাধিক কলেজ থেকে ফোর্সটিসি প্রদান করায় তার শিক্ষা জীবন বিঘিœত হয়। ১৯৬৮-৬৯ সালে খুলনা ল’ কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তার নেতৃত্বে তালা থানা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয় এবং তিনি কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৭ সালে বি.এ পাশ করে তালার জালালপুর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করলেও রাজনীতির প্রতিটি কর্মকা-ে দক্ষ সংগঠক হিসেবে জানান দেন স. ম আলাউদ্দীন। ৬৯-৭০’র উ