সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের সাফল্য এবারও মেডিকেলে চান্স পেল ৪৮ শিক্ষার্থী
তৌসিফ রেজা (বিশেষ প্রতিনিধি)
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর ও সরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় চমক সৃষ্টি করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। পূর্বের সব রেকর্ড ভেঙে এ বছর ৪৮ জন শিক্ষার্থী সুযোগ পেয়েছেন। গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর জানা গেছে এই তথ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চান্স পেয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজে ১১ জন।
কলেজটি থেকে প্রতিবছর উত্তীর্ণ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী শুধু মেডিকেল কলেজ নয় রুয়েট, কুয়েট ও চুয়েট, ঢাবি, জবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়েও ভর্তির সুযোগ পান। গত বছরও এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ৩৫ জন শিক্ষার্থী। তার আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ৪৩। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির ১৪ জন শিক্ষার্থী বুয়েটেও চান্স পেয়েছেন।
এবার পূর্বের চেয়েও ঈর্ষনীয় এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে। সৈয়দপুর যে শিক্ষার নগরী তা আবারও প্রমানিত হওয়ায় পুরো শহরে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
মেধাবী সেই শিক্ষার্থীরা হলো- ঢাকা মেডিকেল কলেজে মিম ও মৌ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে অবন্তী ও স্বচ্ছ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে এলিন, নাঈম ও তনু, রাজশাহী মেডিকেল কলেজে রোজা, তিথি, মাহবুবা ও রাইশা, রংপুর মেডিকেল কলেজে উর্মি, বর্ষা, মামুন, মুরাদ, রিফা, সিন্থি, সাবিরা সুলতানা নুর, নুসরাত জাহান অপি, মাহফুজা আকতার মিতু ও মিথিলা ফারজানা, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে মিতু ও তিশা, শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে সুমাইয়া, অর্থী ও রিফাত, ওসমানী মেডিকেল কলেজে শৈয়লী ও আবির, দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে আশা, রেমি, পীযুষ, সান্তু ও ইশতিয়াক আহমেদ, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নেহা ও সিজু, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে অবন্তী(২) ও মারুফা, পাবনা মেডিকেল কলেজে কাব্য ও মোঃ আরিফ মোহায়মিন, নীলফামারী মেডিকেল কলেজে আফিয়া আদিবা, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে অনামিকা, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে মেরাজ, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে মন্নুজা, সাথি রানি ও ইশরাত জাহান, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে মোশাব্বির, আব্দুল মালেক মেডিকেল কলেজ নোয়াখালীতে সৃষ্টি এবং শহীদ এম মুনছুর আলী মেডিকেল কলেজ সিরাজগঞ্জে নসিবুল হাসান নাঈম।
সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ, পাঠদানে শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং কঠোর তদারকির ফলে প্রতি বছর আশানুরূপ ফলাফল করছেন শিক্ষার্থীরা। মূলত শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রতি বছর মেডিকেল ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ধারাবাহিক সফলতা ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর এ কলেজের শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষাসহ দেশের সকল উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। এ সাফল্যের কারণে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি কলেজটি পরিদর্শন করে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। দেশে বিদেশে উল্লেখযোগ্য স্থানে কর্মরত অসংখ্য নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করেছেন। যা অত্যন্ত গর্বের ও ঐতিহ্যের বিষয়। আমরা এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
উল্লেখ্য, নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের আগের নাম ছিল সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয় (টেকনিক্যাল কলেজ)। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নাম রাখে। কলেজটিতে কেবল বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে তোলা হয়। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানেও গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়।