ঢাকাসোমবার , ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  1. অগ্নিকান্ড
  2. অনুষ্ঠান
  3. অপরাধ
  4. অবৈধ বালু উত্তোলন
  5. অভিনন্দন
  6. অর্থনীতি
  7. আইন ও বিচার
  8. আওয়ামী লীগ
  9. আওয়ামী লীগে
  10. আক্রান্ত
  11. আটক
  12. আত্মহত্যা
  13. আদালত
  14. আনন্দ মিছিল
  15. আন্তর্জাতিক
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পবিত্র রজব ও লাইলাতুল মিরাজ  ✍শেখ খুরশিদ আলম (মানিক) নূরী রিজভী

তৌসিফ রেজা (বিশেষ প্রতিনিধি)
ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪ ১:০২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পবিত্র রজব ও লাইলাতুল মিরাজ
✍শেখ খুরশিদ আলম (মানিক) নূরী রিজভী

পবিত্র মিরাজ হয়েছে রজব মাসে, আর রজব মাস এমন একটি মাস যা অনান্য মাসের তুলনায় অতীত হতেই অধিক সম্মানিত চারটি মাসের অন্যতম।পবিত্র হাদিস শরিফে আছে-

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ، حَدَّثَنَا أَيُّوبُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنِ ابْنِ أَبِي بَكْرَةَ، عَنْ أَبِي بَكْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ الزَّمَانُ قَدِ اسْتَدَارَ كَهَيْئَتِهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ، السَّنَةُ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا، مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ، ثَلاَثَةٌ مُتَوَالِيَاتٌ ذُو الْقَعْدَةِ وَذُو الْحِجَّةِ وَالْمُحَرَّمُ، وَرَجَبُ مُضَرَ الَّذِي بَيْنَ جُمَادَى وَشَعْبَانَ ‏”‏‏.‏

আবূ বাকরাহ (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিতঃ নাবী (ﷺ) বলেন,আল্লাহ যে দিন আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন,সে দিন হতে সময় যেভাবে আবর্তিত হচ্ছিল আজও তা সেভাবে আবর্তিত হচ্ছে। বারো মাসে এক বছর। এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। যুল-কা’দাহ, যূল-হিজ্জাহ ও মুহাররাম। তিনটি মাস পরস্পর রয়েছে। আর একটি মাস হলো -রজব -ই-মুদ্বারা যা জুমাদা ও শা’বান মাসের মাঝে অবস্থিত।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৩১৯৭ হাদিসের মান:সহিহ)

আর রজব মাস এমন একটি মাস যে মাসে স্বয়ং নুরনাবী মুহাম্মাদ (ﷺ) অধিক পরিমাণে নফল রোজা রেখেছেন।
নিম্নের সহিহ হাদিসটি লক্ষ্য করুন –

حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، ح وَحَدَّثَنَا ابْنُ نُمَيْرٍ، حَدَّثَنَا أَبِي، حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ الأَنْصَارِيُّ، قَالَ سَأَلْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ عَنْ صَوْمِ، رَجَبٍ – وَنَحْنُ يَوْمَئِذٍ فِي رَجَبٍ – فَقَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ – رضى الله عنهما – يَقُولُ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَصُومُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يُفْطِرُ ‏.‏ وَيُفْطِرُ حَتَّى نَقُولَ لاَ يَصُومُ ‏.

উসমান ইবনু হাকীম আল আনসারীথেকে বর্ণিতঃ আমি রজব মাসের সিয়াম সম্পর্কে সা’ঈদ ইবনু জুবায়র (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন,আমি ইবনু আব্বাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি,রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একাধারে (নফল)রোজা পালন করতে থাকতেন যাতে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর সিয়াম ছাড়বেন না। আবার তিনি এমনভাবে ক্রমাগত সিয়াম না রেখে থাকতেন যাতে আমরা বলতাম, তিনি বুঝি আর (এ মাসে নফল) রোজা পালন করবেন না।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬১৬ হাদিসের মান: সহিহ)

প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী এ মাসের ২৭ তারিখে নুরনাবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর স্বশরীরে মিরাজ সংঘটিত হয়। নিম্নের রেফারেন্সগুলো তারই সাক্ষ্য বহন করে।আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (رحمة الله) বলেন-

كَانَ الْإِسْرَاء لَيْلَة السَّابِع وَالْعِشْرين من رَجَب

অনুবাদ: প্রিয় রাসূল (ﷺ)‘র ইসরা ভ্রমণ বা মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।
(আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৪/৩৯ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বৈরুত, লেবানন)

বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এ মতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আহলে হাদিসদের ইমাম এবং সকলের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) তার একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন-

أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ لَيْلَةَ السَّابِعِ وَالْعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.

অনুবাদ: অবশ্যই মি‘রাজ সংগঠিত হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ। মহান রব আল্লাহ তা‘য়ালাই ভাল জানেন।

(ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বৈরুত, লেবানন, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/৯৩ পৃষ্ঠা)

★ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

كان ليلة السابع والعشرين من رجب

অনুবাদ: মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।

(কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বৈরুত, লেবানন)

পবিত্র কুরআনের আয়াত ও সহিহ হাদিসের আলোকে এটা প্রমাণিত সত্য যে প্রিয়নাবী মুহাম্মাদ (ﷺ) মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল স্বশরীরে। নিম্নের আয়াত ও হাদিসটি লক্ষ্য করুন –

سُبۡحٰنَ الَّذِیۡۤ اَسۡرٰی بِعَبۡدِہٖ لَیۡلًا مِّنَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ اِلَی الۡمَسۡجِدِ الۡاَقۡصَا الَّذِیۡ بٰرَکۡنَا حَوۡلَہٗ لِنُرِیَہٗ مِنۡ اٰیٰتِنَا ؕ اِنَّہٗ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡبَصِیۡرُ ﴿۱﴾
অনুবাদ:পবিত্রতা তারই জন্য, যিনি আপন বান্দা
(মুহাম্মাদ)কে রাতারাতি নিয়ে গেছেন মসজিদ-ই হারাম হ’তে… মসজিদ-ই আক্ব্‌সা পর্যন্ত, যার আশেপাশে আমি বরকত রেখেছি,যাতে আমি তাকে মহান নিদর্শন সমূহ দেখাই; নিশ্চই তিনি শুনেন, দেখেন।

(সূরা বানী ইসরাঈল,আয়াত নাং ০১,সুরা নং ১৭)

💖পবিত্র সহীহ্ হাদিস এর আলোকে মিরাজুন্নাবী—

يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ عَنْ يُونُسَ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ كَانَ أَبُو ذَرٍّ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ فُرِجَ عَنْ سَقْفِ بَيْتِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهُ فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَلَمَّا جِئْتُ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا قَالَ جِبْرِيلُ لِخَازِنِ السَّمَاءِ افْتَحْ قَالَ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا جِبْرِيلُ قَالَ هَلْ مَعَكَ أَحَدٌ قَالَ نَعَمْ مَعِي مُحَمَّدٌ فَقَالَ أُرْسِلَ إِلَيْهِ قَالَ نَعَمْ فَلَمَّا فَتَحَ عَلَوْنَا السَّمَاءَ الدُّنْيَا فَإِذَا رَجُلٌ قَاعِدٌ عَلَى يَمِينِهِ أَسْوِدَةٌ وَعَلَى يَسَارِهِ أَسْوِدَةٌ إِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ يَسَارِهِ بَكَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ قُلْتُ لِجِبْرِيلَ مَنْ هَذَا قَال هَذَا آدَمُ وَهَذِهِ الْأَسْوِدَةُ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ نَسَمُ بَنِيهِ فَأَهْلُ الْيَمِينِ مِنْهُمْ أَهْلُ الْجَنَّةِ وَالْأَسْوِدَةُ الَّتِي عَنْ شِمَالِهِ أَهْلُ النَّارِ فَإِذَا نَظَرَ عَنْ يَمِينِهِ ضَحِكَ وَإِذَا نَظَرَ قِبَلَ شِمَالِهِ بَكَى حَتَّى عَرَجَ بِي إِلَى السَّمَاءِ الثَّانِيَةِ فَقَالَ لِخَازِنِهَا افْتَحْ فَقَالَ لَهُ خَازِنِهَا مِثْلَ مَا قَالَ الْأَوَّلُ فَفَتَحَ قَالَ أَنَسٌ فَذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ فِي السَّمَوَاتِ آدَمَ وَإِدْرِيسَ وَمُوسَى وَعِيسَى وَإِبْرَاهِيمَ صَلَوَاتُ اللهِ عَلَيْهِمْ وَلَمْ يُثْبِتْ كَيْفَ مَنَازِلُهُمْ غَيْرَ أَنَّهُ ذَكَرَ أَنَّهُ وَجَدَ آدَمَ فِي السَّمَاءِ الدُّنْيَا وَإِبْرَاهِيمَ فِي السَّمَاءِ السَّادِسَةِ قَالَ أَنَسٌ فَلَمَّا مَرَّ جِبْرِيلُ بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِإِدْرِيسَ قَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الصَّالِحِ وَالْأَخِ الصَّالِحِ فَقُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا إِدْرِيسُ ثُمَّ مَرَرْتُ بِمُوسَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الصَّالِحِ وَالْأَخِ الصَّالِحِ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا مُوسَى ثُمَّ مَرَرْتُ بِعِيسَى فَقَالَ مَرْحَبًا بِالْأَخِ الصَّالِحِ وَالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الصَّالِحِ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا عِيسَى ثُمَّ مَرَرْتُ بِإِبْرَاهِيمَ فَقَالَ مَرْحَبًا بِالنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الصَّالِحِ وَالِابْنِ الصَّالِحِ قُلْتُ مَنْ هَذَا قَالَ هَذَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ ابْنُ شِهَابٍ فَأَخْبَرَنِي ابْنُ حَزْمٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ وَأَبَا حَبَّةَ الأَنْصَارِيَّ كَانَا يَقُولَانِ قَالَ النَّبِيُّ ثُمَّ عُرِجَ بِي حَتَّى ظَهَرْتُ لِمُسْتَوَى أَسْمَعُ فِيهِ صَرِيفَ الْأَقْلَامِ قَالَ ابْنُ حَزْمٍ وَأَنَسُ بْنُ مَالِكٍ قَالَ النَّبِيُّ فَفَرَضَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى أُمَّتِي خَمْسِينَ صَلاَةً فَرَجَعْتُ بِذَلِكَ حَتَّى مَرَرْتُ عَلَى مُوسَى فَقَالَ مَا فَرَضَ اللهُ لَكَ عَلَى أُمَّتِكَ قُلْتُ فَرَضَ خَمْسِينَ صَلاَةً قَالَ فَارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى قُلْتُ وَضَعَ شَطْرَهَا فَقَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ فَرَاجَعْتُ فَوَضَعَ شَطْرَهَا فَرَجَعْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ ارْجِعْ إِلَى رَبِّكَ فَإِنَّ أُمَّتَكَ لاَ تُطِيقُ ذَلِكَ فَرَاجَعْتُهُ فَقَالَ هِيَ خَمْسٌ وَهِيَ خَمْسُونَ لاَ يُبَدَّلُ الْقَوْلُ لَدَيَّ فَرَجَعْتُ إِلَى مُوسَى فَقَالَ رَاجِعْ رَبَّكَ فَقُلْتُ اسْتَحْيَيْتُ مِنْ رَبِّي ثُمَّ انْطَلَقَ بِي حَتَّى انْتَهَى بِي إِلَى سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى وَغَشِيَهَا أَلْوَانٌ لاَ أَدْرِي مَا هِيَ ثُمَّ أُدْخِلْتُ الْجَنَّةَ فَإِذَا فِيهَا حَبَايِلُ اللُّؤْلُؤِ وَإِذَا تُرَابُهَا الْمِسْكُ.

অনুবাদ : হযরত আনাস ইবনু মালিক (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃহযরত আবূ যার (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু),হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি মক্কায় থাকা অবস্থায় আমার গৃহের ছাদ উন্মুক্ত করা হ’ল। অতঃপর হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) অবতীর্ণ হয়ে আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। আর তা যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করলেন। অতঃপর হিকমাত ও ঈমানে ভর্তি একটি সোনার পাত্র নিয়ে আসলেন এবং তা আমার বুকের মধ্যে ঢেলে দিয়ে বন্ধ করে দিলেন। অতঃপর হাত ধরে আমাকে দুনিয়ার আকাশের দিকে নিয়ে চললেন। পরে যখন দুনিয়ার আকাশে আসলাম হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আসমানের রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। আসমানের রক্ষক বললেনঃ কে আপনি? হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ আমি হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম)। (আকাশের রক্ষক) বললেনঃ আপনার সঙ্গে কেউ রয়েছেন কি? হযরত জিবরীল বললেনঃ হ্যাঁ,হযরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রয়েছেন। অতঃপর রক্ষক বললেনঃ তাকে কি ডাকা হয়েছে?হযরত জিবরীল বললেনঃ হ্যাঁ। অতঃপর যখন আমাদের জন্য দুনিয়ার আসমানকে খুলে দেয়া হল আর আমরা দুনিয়ার আসমানে প্রবেশ করলাম তখন দেখি সেখানে এমন এক ব্যাক্তি উপবিষ্ট রয়েছেন যার ডান পাশে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি রয়েছে আর বাম পাশে রয়েছে অনেকগুলো মানুষের আকৃতি। যখন তিনি ডান দিকে তাকাচ্ছেন হেসে উঠছেন আর যখন বাম দিকে তাকাচ্ছেন কাঁদছেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ স্বাগতম ওহে সৎ নাবী ও সৎ সন্তান। আমি হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম)-কে বললামঃ কে এই ব্যক্তি? তিনি জবাব দিলেনঃ ইনি হচ্ছেন হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)। আর তার ডানে বামে রয়েছে তাঁর সন্তানদের রূহ। তাদের মধ্যে ডান দিকের লোকেরা জান্নাতী আর বাম দিকের লোকেরা জাহান্নামী। ফলে তিনি যখন ডান দিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বাম দিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর হযরত জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) আমাকে নিয়ে দ্বিতীয় আসমানে উঠলেন। অতঃপর তার রক্ষককে বললেনঃ দরজা খোল। তখন এর রক্ষক প্রথম রক্ষকের মতই প্রশ্ন করলেন। পরে দরজা খুলে দেয়া হল। হযরত আনাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ হযরত আবূ যার (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) উল্লেখ করেন যে, তিনি [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ] আসমানসমূহে হযরত আদাম,হযরত ইদরীস,হযরত মূসা, হযরত ঈসা এবং হযরত ইব্রাহীম (‘আলাইহিমুস্ সালাম)-কে পান। কিন্তু হযরত আবূ যার (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু.) তাদের স্থানসমূহ নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। তবে এতটুকু উল্লেখ করেছেন যে, তিনি হযরত আদম (আলাইহিস সালাম)-কে দুনিয়ার আকাশে এবং হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে ষষ্ঠ আসমানে পান।হযরত আনাস (রদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ হযরত জিব্রীল (আ’লাইহিস সালাম) যখন প্রিয় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে নিয়ে হযরত ইদরীস (আলাইহিস সালাম)এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করেন তখন হযরত ইদ্রীস (আলাইহিস সালাম) বলেনঃ মারহাবা ওহে সৎ ভাই ও পুণ্যবান নবী। আমি বললামঃ ইনি কে? হযরত জিবরীল বললেনঃ ইনি হচ্ছেন হযরত ইদ্রীস (আলাইহিস সালাম)।অতঃপর আমি হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করা কালে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে সৎ নাবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? জিবরীল বললেনঃ ইনি হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)। অতঃপর আমি হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করা কালে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে সৎ নাবী ও পুণ্যবান ভাই। আমি বললামঃ ইনি কে? জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ ইনি হচ্ছেন হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম)। অতঃপর আমি হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি বলেনঃ মারহাবা হে পুণ্যবান নাবী ও নেক সন্তান। আমি বললামঃ ইনি কে? হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম) বললেনঃ ইনি হচ্ছেন হযরত ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম)।ইবনু শিহাব বলেনঃ ইবনু হাযম আমাকে সংবাদ দিয়েছেন যে,হযরত ইবনু আববাস ও হযরত আবূ হাববা আল-আনসারী উভয়ে বলতেনঃ প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর আমাকে আরো উপরে উঠানো হল অতঃপর এমন এক সমতল স্থানে এসে আমি উপনীত হই যেখানে আমি লেখার শব্দ শুনতে পাই।হযরত ইবনু হায্ম ও হযরত আনাস ইবনু মালিক (রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেনঃ প্রিয় রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অতঃপর আল্লাহ আমার উম্মাতের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করে দেন। অতঃপর তা নিয়ে আমি ফিরে আসি। অবশেষে যখন হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করি তখন তিনি বললেনঃ আল্লাহ তা‘আলা আপনার উম্মাতের উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললামঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। তিনি বললেনঃ আপনি আপনার পালনকর্তার নিকট ফিরে যান, কেননা আপনার উম্মাত তা আদায় করতে পারবে না।আমি ফিরে গেলাম। আল্লাহ তা‘আলা কিছু অংশ কমিয়ে দিলেন। আমি হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট পুনরায় গেলাম আর বললামঃ কিছু অংশ কমিয়ে দিয়েছেন। তিনি বললেনঃ আপনি পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কারণ আপনার উম্মাত এটিও আদায় করতে পারবে না। আমি ফিরে গেলাম। তখন আরো কিছু অংশ কমিয়ে দেয়া হলো। আবারও হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট গেলাম, এবারও তিনি বললেনঃ আপনি পুনরায় আপনার প্রতিপালকের নিকট যান। কারণ আপনার উম্মত এটিও আদায় করতে সক্ষম হবে না। তখন আমি পুনরায় গেলাম, তখন আল্লাহ বললেনঃ এই পাঁচই (নেকির দিক দিয়ে) পঞ্চাশ (বলে গণ্য হবে)। আমার কথার কোন রদবদল হয় না। আমি পুনরায় হযরত মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর নিকট আসলে তিনি আমাকে আবারও বললেনঃ আপনার প্রতিপালকের নিকট পুনরায় যান। আমি বললামঃ পুনরায় আমার প্রতিপালকের নিকট যেতে আমি লজ্জাবোধ করছি। অতঃপর হযরত জিবরীল (আলাইহিস সালাম)আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা* পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। আর তখন তা বিভিন্ন রঙে আবৃত ছিল, যার তারপর্য আমি অবগত ছিলাম না। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলে আমি দেখতে পেলাম যে, তাতে রয়েছে মুক্তোমালা আর তার মাটি হচ্ছে কস্তুরী।(সহিহ বুখারির হাদিস নং৩৪৯,এবং সহিহ মুসলিম হাদিস নং ১৬৩,হাদিসের মান সহিহ)। এরুপ প্রায় ৩০+ সহীহ হাদিস আছে, লিখনী দীর্ঘ হবে বলে মাত্র একটা উল্লেখ করলাম।

এই রাতেই প্রিয় নাবী মুহাম্মাদ (ﷺ) মহান আল্লাহকে আপন চর্মচক্ষে অবলোকন করার নিয়ামত দ্বারা ধন্য হন। পবিত্র হাদিস শরিফে আছে-হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে আকরাম (رحمة الله) ইরশাদ করেন-

رَأَيْت رَبِّي عَزَّوَجَلَّ لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ

অনুবাদ: আমি আমার রব আল্লাহ তা‘য়ালাকে দেখেছি, তবে তাঁর সাথে (সৃষ্টির) কোন সদৃশ্য বা তুলনা নেই।
(দায়লামী,আল-ফিরদাউস,২/২৫৪পৃষ্ঠা,হাদিসঃ ৩১৮৩)

১৪শ শতাব্দীর মহান মুজাদ্দিদ,সহস্র গ্রন্থ রচিয়তা,ইমামে আহলে সুন্নাহ ইমাম আল্লামা আহমদ রাযা খান বেরলভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি সুন্দর লিখেছেন-

“اور کوئی غیب کیا تم سے نہاں ہو بھلا
۔جب نہ خدا ہی چھپا تم پہ کروڑوں درود”

এই রাতে আকাশে যাওয়ার পথে নুরনাবী মুহাম্মাদ (ﷺ) বায়তুল আক্বসায় সকল নাবী-রাসূলের ইমামতি করেন এবং রাতেই উম্মাতে মুহাম্মাদীর জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের উপহার নিয়ে আসেন,তাই আমাদের উচিত সেই উপহারের কদর করা ও শুকরিয়া স্বরূপ ইবাদতের মাধ্যমে এই দিনটি অতিবাহিত করা। মহান আল্লাহ তাঁর হাবীবের উসিলায় আমাদের সকলকে নিয়মিত নামাজ আদায় করার তৌফিক দিন (আমিন)।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।