সীতাকুণ্ডে জাহাজ কাটা বন্ধে
চাহিদা কমে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অক্সিজেন কারখানাগুলো
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধিঃ
সীতাকুণ্ডে শিপ ইয়ার্ডে জাহাজ ভাঙা ও ইস্পাত শিল্পে লৌহজাত কাটাকাটিতে প্রতিনিয়ত বোতলজাত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। অক্সিজেন ছাড়া এ দুই শিল্প একেবারেই অচল। ফলে এই দুই শিল্পের দৈনন্দিনের প্রয়োজনে সীতাকুণ্ডে গড়ে ওঠে অন্তত ১৫টি অক্সিজেন কারখানা।
এসব উৎপাদিত অক্সিজেন অনেকেই নিজেদের কারখানার চাহিদা মিটিয়ে বাহিরের লোহার ডিপু ও শিল্প মালিকদের কাছে বিক্রি করে থাকে। কিন্তু জাহাজ ভাঙা শিল্প ও ইস্পাত কারখানাগুলোর দুরবস্থা শুরুর পর একে একে বন্ধ হয়ে হচ্ছে অক্সিজেন কারখানাগুলোও। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এ শিল্পটি হুমকির মুখে পড়েছে।
শিপইয়ার্ডের মালিক, জাহাজভাঙা কারখানার কন্ট্রাক্টর ও রড কারখানা সূত্রে জানা গেছে, চালু থাকা সব শিপইয়ার্ডে প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়, অক্সিজেন ছাড়া ইযার্ড অচল।এর বাইরে ইস্পাত কারখানার মধ্যে বিএসআরএম ,শীতলপুর ষ্টীল,সীমাষ্টীল, জিপিএইচ, মিপইয়ার্ড কেন্দ্রীক খুচরা লোহা ব্যবসায়ী লোহা ডিপু সহ শীর্ষস্থানীয় ইস্পাত, কারখানাগুলোর কাটিং ও ওয়েল্ডিং সেকশনে অক্সিজেন ব্যবহৃত হয়। অক্সিজেন ছাড়া কারখানা অচল, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। এ ছাড়া চেসিস ও পার্টস সংযোজন, অটোমোবাইল ও গাড়ির ওয়ার্কশপসহ নানা কাজে অক্সিজেন ব্যবহার হযে থাকে।
অত্যাধিক প্রয়োজনীয় এই অক্সিজেন কারখানা বন্ধ হচ্ছে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে। জাহাজভাঙা ইয়ার্ড ইতিমধ্যে শতাধিক বন্ধ হয়ে যাওযায় অক্সিজেনের চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে। চট্টগ্রামে ১৫টি অক্সিজেন কারখানা গড়ে উঠলেও গত দুই বছরেই সাতটি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়া কারখানাগুলো হলো রিগ্যাল অক্সিজেন লিমিটেড, এআরএল অক্সিজেন লিমিটেড, এসএল অক্সিজেন লিমিটেড, ফয়জুন অক্সিজেন লিমিটেড ও রাইজিং অক্সিজেন লিমিটেড। চার মাস আগে বন্ধ হয়ে গেছে ব্রাদার্স অক্সিজেন লিমিটেড। সে কারখানায় প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদন হতো। সর্বশেষ ৪ জানুয়ারি বিস্ফোরণের কারণে বন্ধ হয়ে যায় সীমা অক্সিজেন প্লান্ট।
এর বাইরে বন্ধের পথে থাকা কারখানাগুলোর একটি সীতাকুণ্ডের কেআর অক্সিজেন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ৭০০ সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদন করে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে মাত্র ৫-৭টি সিলিন্ডার অক্সিজেন উৎপাদিত হচ্ছে। এতে মাসে ৩৫-৪০ লাখ টাকা লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। কারখানাটির শ্রমিক সংখ্যাও ১৫০ থেকে ৮৫ জনে নেমে এসেছে।
কেআর গ্রুপের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু কে বলেন, কারখানায় মাত্র ৩৫-৪০ জন কর্মী রয়েছে। কর্মীদের বেতন ও গ্যাস-বিদ্যুৎসহ মাসে কারখানা ব্যয় অন্তত ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৪০ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে উৎপাদন কারনে। তাই আগামী মাস থেকে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কয়েকটি কারখানা ুৎপাদন চালু রেখেছে শুধুমাত্র তাদের নিজেদের ইস্পাত রোড কারখানাগুলোতে ব্যবহারের জন্য।
উল্লেখ্য,শিপ ইয়ার্ডে পরিবেশ মন্ত্রনালয় কর্তৃক কমলা থেকে লাল ম্রেনীভূক্ত করায় জাহাজ ভাঙ্গার কাজ থমকে দাঁড়ায়।৪১ টি জাহাজ ভাঙ্গার কাজ বন্ধ রয়েছে,ফলে অক্সিজেন ব্যবহারে চাহিদা নেই বললেই চলে,ফলে লোকসান এড়াতে অক্সিজেন কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে মালিকরা।