Dhaka 3:19 pm, Saturday, 8 November 2025

জুলাই-আগস্ট ছাত্র হত্যা ঘটনায় একাধিক মামলার আসামী অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন এখনো বহাল তবিয়তে

  • Reporter Name
  • Update Time : 07:44:08 am, Wednesday, 30 July 2025
  • 253 Time View
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
 জুলাই-আগস্ট ছাত্র হত্যা ঘটনায় একাধিক মামলার আসামী ঘুরে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম শহরে। এবার তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বনের গাছ কাটা ও পাহাড় কাটার অভিযোগে। আর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রামে যে মামলা হয়েছে তার নম্বর: সিআর মামলা নং-৪৩০/২০২৪ ইং (রাঙ্গুনীয়া থানা)। এ মামলায় হাছান মাহমুদ প্রধান আসামী। আর অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ৬৭ নম্বর আসামী। মামলার বাদী রাঙ্গুনীয়ার মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। মামলার এজা ১ নং আসামী সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সহযোগিতায় অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ও অন্যান্যরা সাথারণ মানুষের জমি থেকে মাটি কেটে চট্টগ্রাম শহরের ডেভলপারদের কাছে বিক্রি করেছে। যাতে সর্বশান্ত হয়েছে এলাকার সাধারণ কৃষক ও ভুমি মালিক। এছাড়াও চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানা ছাড়াও অন্যান্য থানায় জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার একাধিক মামলা রয়েছে স্বপনের নামে। কোতয়ালী থানায় একটি মামলার ৭৪ নং আসামী তিনি।
আওয়ামী লগের সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বনের গাছ কেটে উজার করেছে। হাসান মাহমুদের দাপটের কারণে অহিদ সিরাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি বন বিভাগের কেউ। পাহাড়ের মাটি কেটে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর প্রজেক্টের মাটি ভরাট করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
অহিদ সিরাজের পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার সময় পাহাড় ধসে ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলায় প্রথম আসামী সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ও অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ৬৭ নাম্বার আসামী। স্বপন চট্টগ্রামের সাবেক এমপি এম এ লতিফ ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীনের ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবেও পরিচিত। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের হাত করে অহিদ সিরাজ কামিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রীক এম এ লতিফের ব্যবসার একচ্ছ্বত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন স্বপন। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউজ, ইপিজেড, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম চেম্বার, তেল শোধনাগারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও লতিফের উপর কথা বলতে পারতেন না। সরকারের ঘনিষ্ট কিছু লোকজনকে ম্যানেজ করে স্বপন কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, এম এ লতিফের প্রভাবে চট্টগ্রাম চেম্বারের দখল নেন অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। লতিফের অল্প বয়সী ছেলে ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি বানিয়ে হাতিয়ে নেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মান কাজ ও বাণিজ্য মেলার স্টল বরাদ্দ।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী নদীতে লতিফের ছত্রছায়ায় অবৈধ মালামাল, চোরায় তেলসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য জড়িত ছিল স্বপন।
লতিফের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সুবাদে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতেন অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। শুধু চট্টগ্রাম চেম্বার নয়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাও দখলে নিয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বনে যান অহিদ চৌধুরী। সেখানে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে শুরু করেন দূর্নীতি। ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম ল’ কলেজে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভুত্থানে শেখ হাসিনার সাম্রাজ্যে ধস নামলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অহিদ সিরাজ চৌধুরীর মতো দুর্নীতিবাজরা। ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, ঠিকাদারসহ সাধারণ মানুষের।
Tag :
সম্পাদক ও প্রকাশক : আবুল হাসান

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয়

বিএনপির প্রার্থী সা চিং প্রু জেরীর সাথে লামা মহিলা নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎ

জুলাই-আগস্ট ছাত্র হত্যা ঘটনায় একাধিক মামলার আসামী অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন এখনো বহাল তবিয়তে

Update Time : 07:44:08 am, Wednesday, 30 July 2025
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
 জুলাই-আগস্ট ছাত্র হত্যা ঘটনায় একাধিক মামলার আসামী ঘুরে বেড়াচ্ছেন চট্টগ্রাম শহরে। এবার তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বনের গাছ কাটা ও পাহাড় কাটার অভিযোগে। আর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, চট্টগ্রামে যে মামলা হয়েছে তার নম্বর: সিআর মামলা নং-৪৩০/২০২৪ ইং (রাঙ্গুনীয়া থানা)। এ মামলায় হাছান মাহমুদ প্রধান আসামী। আর অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ৬৭ নম্বর আসামী। মামলার বাদী রাঙ্গুনীয়ার মৃত নাসির উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। মামলার এজা ১ নং আসামী সাবেক মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের সহযোগিতায় অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ও অন্যান্যরা সাথারণ মানুষের জমি থেকে মাটি কেটে চট্টগ্রাম শহরের ডেভলপারদের কাছে বিক্রি করেছে। যাতে সর্বশান্ত হয়েছে এলাকার সাধারণ কৃষক ও ভুমি মালিক। এছাড়াও চট্টগ্রামের কোতয়ালী থানা ছাড়াও অন্যান্য থানায় জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা হত্যার একাধিক মামলা রয়েছে স্বপনের নামে। কোতয়ালী থানায় একটি মামলার ৭৪ নং আসামী তিনি।
আওয়ামী লগের সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বনের গাছ কেটে উজার করেছে। হাসান মাহমুদের দাপটের কারণে অহিদ সিরাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি বন বিভাগের কেউ। পাহাড়ের মাটি কেটে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন ডেভেলপার কোম্পানীর প্রজেক্টের মাটি ভরাট করে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
অহিদ সিরাজের পালিত সন্ত্রাসী দিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটার সময় পাহাড় ধসে ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে ভুক্তভোগী পরিবার। মামলায় প্রথম আসামী সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ ও অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন ৬৭ নাম্বার আসামী। স্বপন চট্টগ্রামের সাবেক এমপি এম এ লতিফ ও সাবেক মেয়র আ.জ.ম. নাছির উদ্দীনের ঘনিষ্ট সহযোগী হিসেবেও পরিচিত। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক থাকাকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের হাত করে অহিদ সিরাজ কামিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রীক এম এ লতিফের ব্যবসার একচ্ছ্বত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেন স্বপন। দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউজ, ইপিজেড, বিমানবন্দর, চট্টগ্রাম চেম্বার, তেল শোধনাগারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও লতিফের উপর কথা বলতে পারতেন না। সরকারের ঘনিষ্ট কিছু লোকজনকে ম্যানেজ করে স্বপন কয়েকটি মামলায় জামিন পেয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ, এম এ লতিফের প্রভাবে চট্টগ্রাম চেম্বারের দখল নেন অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। লতিফের অল্প বয়সী ছেলে ওমর হাজ্জাজকে সভাপতি বানিয়ে হাতিয়ে নেন ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নির্মান কাজ ও বাণিজ্য মেলার স্টল বরাদ্দ।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ও কর্ণফুলী নদীতে লতিফের ছত্রছায়ায় অবৈধ মালামাল, চোরায় তেলসহ কোটি কোটি টাকার অবৈধ বাণিজ্য জড়িত ছিল স্বপন।
লতিফের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সুবাদে ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিতে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতেন অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। শুধু চট্টগ্রাম চেম্বার নয়, চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থাও দখলে নিয়ে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বনে যান অহিদ চৌধুরী। সেখানে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রভাব কাজে লাগিয়ে শুরু করেন দূর্নীতি। ছাত্রজীবনে চট্টগ্রাম ল’ কলেজে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন অহিদ সিরাজ চৌধুরী স্বপন। ছিলেন মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির সদস্য। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভুত্থানে শেখ হাসিনার সাম্রাজ্যে ধস নামলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন অহিদ সিরাজ চৌধুরীর মতো দুর্নীতিবাজরা। ধরাছোয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী, ঠিকাদারসহ সাধারণ মানুষের।