সাতক্ষীরায় পুকুরের একপাড়ে মসজিদ অপর পাড়ে মন্দির
বাঁশদহায় চেয়ারম্যান-মেম্বরের ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন হচ্ছে কাঁদাবালু
মোঃ মুজাহিদ ক্রাইম রিপোর্টার:
পুকুরের একপাড়ে মসজিদ এবং অপর পাড়ে মন্দির। মাঝখানের সেই পুকুর থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কাঁদাবালু উত্তোলন করে দেওয়া হচ্ছে রাস্তায়। কয়েকদিন আগে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তা বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিলেও সেটি আর বেশি দিন আগায়নি। সোমবার থেকে আবারও শুরু হয়েছে কাঁদাবালু উত্তোলন।
সদরের বাঁশদহা ইউনিয়নের বাঁশদহা বলফিল্ড এর পশ্চিম পাশে ঘটনাটি ঘটলেও অজানা কারণে প্রশাসনসহ কেউ কোন কথা বলছেননা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাঁশদহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার মফিজুর ও ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর বদরুজ্জামান খোকা বালু ইত্তোলনে সরাসরি নেতৃত্ব দেওয়ায় বন্ধ হচ্ছেনা ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন। বরং পুকুর থেকে কাঁদাবালু উত্তোলন করার কারণে মসজিদ ও মন্দির ধ্বসে পুকুরে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তারা। তবে ভয়ে কেউ কোন কথা বলতে সাহস পাচ্ছেননা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই জানান, বাঁশদহা ইউনিয়নের ভবানীপুর ব্রীজের পাশ থেকে ট্যাংরাগামী রাস্তা পিচের কার্পেটিং এর জন্য খনন করা হয়। বালু মহাল থেকে বালু এনে ওই রাস্তায় দেওয়ার কথা থাকলেও সাব ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম যোগাযোগ করেন স্থানীয় মেম্বর বদরুজ্জামান খোকা ও ড্রেজার মেশিনের মালিক মৃত মোখছেদ আলী গাইনের ছেলে শফিকুল ইসলাম কালু(গাইন) সাথে। এরপর বদরুজ্জামান খোকা চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে মসজিদ মন্দিরের মাঝখানে জিন্নাত আলীর পুকুর হতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং কয়েকদিন আগে বালু উত্তোলন শুরু করলে নায়েব এসে তা বন্ধ করে দেন। এরপর গত সোমবার হতে আবারও কাঁদাবালু উত্তোলন করে রাস্তায় দিচ্ছে। ঠিকাদারের একটু লাভের জন্য এই কাঁদাবালু রাস্তায় দিলে একদিকে যেমন রাস্তা মজবুত হবেনা আর অপর দিকে পুকুর থেকে কাঁদাবালু উত্তোলন করলে পুকুর ধ্বসে মসজিদ ও মন্দির পুকুরে চলে যেতে পারে। আমরা প্রশাসনের কাছে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ড্রেজার মেশিন বন্ধের দাবী জানাচ্ছি।
বালু উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে ড্রেজার মেশিনের মালিক শফিকুল ইসলাম কালু বলেন, বালু উত্তোলন করে রাস্তায় দিচ্ছি। বিস্তারিত জানতে আপনারা মেম্বরের সাথে কথা বলেন।
মসজিদ ও মন্দিরের মাঝখানের পুকুর থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে স্বাীকার করে বাঁশদহা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মেম্বর বদরুজ্জামান বলেন, চেয়ারম্যানসহ পরিষদের সকল মেম্বরদের নিয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু উত্তোলন করে রাস্তায় না দিলে কাজটি ফিরে যেত। এজন্য চেয়ারম্যান উপজেলায় কথা বলেছেন। তবে বালু উত্তোলনে আমাদের কোন স্বার্থ নেই।
সাব ঠিকাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, বালিতো আমি উঠাচ্ছিনা। বালি উঠাচ্ছে মেম্বর বদরুজ্জামান খোকা ও চেয়ারম্যান মাস্টার মফিজুর রহমান। আমি সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজের তদারকি করছি। পুকুর থেকে কাঁদাবালি উত্তোলন করে রাস্তায় দেওয়া যাবে সিডিউলে এমন উল্লেখ আছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি অতো লেখাপড়া জানিনা। একারণে সিডিউলে কি উল্লেখ আছে তা বলতে পারবোনা।
বাঁশদহা ইউনিয়ন উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা মহাসীন আলী বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জানতে পেরে কয়েক দিন আগে বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছিলাম। তবে আবার বালু উত্তোলন হচ্ছে শুনে ঘটনাস্থলে গেলে বালু উত্তোলন কারীরা বলেন, ইউএনও স্যারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নাকি তারা বালু উত্তোলন করছেন।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রকৌশলী এয়াকুব আলী বলেন, রাস্তায় বালু ভরাট করা হচ্ছে বলে জেনেছি। তবে কোথা থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে সেটি জানিনা।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, বালু উত্তোলন মাঝে বন্ধ ছিল। তবে এখন বালু উত্তোলন হচ্ছে কিনা তা বলতে পারবোনা। বালু উত্তোলনের ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।