
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নির্মাণাধীন লিফট স্থাপনের কাজ চাঁদাবাজদের হুমকির কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। ২৫০ শয্যার জেলা সদর হাসপাতালের উন্নয়নকাজে এমন বাধা সৃষ্টি হওয়ায় জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সভায় খোদ জেলা প্রশাসক সুলতানা আক্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সম্প্রতি রাজবাড়ীর অফিসার ক্লাবে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় জেলা প্রশাসক হাসপাতাল নির্মাণকাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, স্থানীয় চাঁদাবাজদের চাঁদা দাবির কারণে লিফটের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি জানান, ঠিকাদারের কর্মীরা ভয়ভীতির মধ্যে থাকায় কাজ এগোচ্ছে না।
জানা গেছে, একাধিকবার চাঁদাবাজ চক্র ঠিকাদারের কাছে চাঁদা আদায় করেছে। এক দল চাঁদা নিয়ে যাওয়ার পর আরেক দল এসে আবার দাবি করছে। ঠিকাদাররা নিরুপায় হয়ে কখনো টাকা দিয়েছেন, আবার কখনো কাজ বন্ধ রেখে নিরাপত্তার জন্য আবেদন করেছেন। এমনকি নির্মাণসাইট থেকে চোরেরা এসির তার, আউটডোর যন্ত্রপাতি চুরি করে নিয়ে গেছে বলেও জানান গণপূর্ত কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে পৌঁছেছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি। একটি চিঠি চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র ম্যানেজার আব্দুল্লাহ আল মামুন রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে দেন, যার অনুলিপি জেলা প্রশাসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ১৯ জানুয়ারি দুপুরে ৮ থেকে ১০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি লিফটের নির্মাণস্থলে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করে এবং মূল্যবান মালামাল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। চাঁদা না দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চিঠিতে আগামী দুই মাসের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আরেকটি চিঠি ২১ জানুয়ারি রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ মণ্ডল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে পাঠান, যাতে মালামাল ও জনবলকে ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করার অনুরোধ জানানো হয়। এই চিঠির অনুলিপিও জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ একাধিক দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
রাজবাড়ী জেলা পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি উঠে আসার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। রাজবাড়ীতে কোনো অবস্থাতেই চাঁদাবাজি বরদাশত করা হবে না।”
রাজবাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি জ্যোতি শঙ্কর ঝন্টু বলেন, “হাসপাতাল একটি মানবিক স্থাপনা। সেখানে কাজ করতে গিয়ে চাঁদা দাবি করা শুধু অপরাধ নয়, এটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হুমকি। এ ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্টদের আরো গুরুত্ব দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। আমরা দ্রুত তদন্ত করে চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে রোগীদের দুর্ভোগ কমাতে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ী জেলা সদর হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার কাজ শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে ৩ কোটি ৯১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয়ে আটতলা পর্যন্ত লিফট স্থাপনের কাজ শুরু হলেও, চাঁদাবাজদের কারণে তা এখন বন্ধ হয়ে আছে।