
মঙ্গলবার দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের সিটি করপোরেশন কবরস্থানে নিহতদের দাফনের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, ভবিষ্যতে এ কবরস্থান সংরক্ষণ করে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে করে জাতি এই হৃদয়বিদারক ঘটনায় প্রাণ হারানো শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানাতে পারবে।
উল্লেখ্য, সোমবার দুপুরে উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভ্যন্তরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় পতিত হয়। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩১ জন এবং আহত হয়ে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ১৬৫ জন।
দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যেই একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, শিক্ষাবিদ, নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং সিটি করপোরেশন প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিটি কাজ করছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “এই দুর্ঘটনায় আমরা যে প্রাণগুলো হারিয়েছি, তারা আমাদের ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দিতে পারত। তাদের আত্মত্যাগ ও দুঃসহ মৃত্যু যেন জাতি ভুলে না যায়, সে উদ্দেশ্যে এই কবরস্থানকে একটি স্থায়ী স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রূপান্তর করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সকল নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।”
উত্তরা সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কবরস্থানের নির্ধারিত অংশটি এখন পরিষ্কার ও প্রস্তুতির কাজ চলছে। নিহতদের ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসারে দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে দুর্ঘটনার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং পুরো ক্যাম্পাসে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা এই ঘটনায় চরম মর্মাহত ও শঙ্কিত। অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। নিহতদের স্মরণে আজ সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের সহায়তায় আহতদের চিকিৎসা ব্যয় বহনের জন্য তহবিল গঠন, মানসিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।
এই দুর্ঘটনা কেবল একটি বিমান পতনের ঘটনা নয়; এটি দেশের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় তরুণদের প্রাণহানি এবং সমগ্র জাতিকে নাড়া দেওয়া এক ভয়াবহ শোকের স্মারক। প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কবরস্থান নির্ধারণ এবং স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির ঘোষণা নিঃসন্দেহে জাতির এই ক্ষতিকে সম্মানিতভাবে ধারণের একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।