
মোঃ শাহজাহান বাশার, সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার
অবৈধ গ্যাস সংযোগ রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। গ্যাস অপব্যবহার, অবৈধ সংযোগ ও বকেয়া বিল আদায়ে চলমান তিতাস গ্যাসের বিশেষ অভিযানের অংশ হিসেবে সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) নারায়ণগঞ্জ ও সাভার অঞ্চলে একযোগে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জোরদার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এতে একাধিক শিল্প-কারখানা, আবাসিক সংযোগ এবং সিএনজি স্টেশনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযানে সংযোগ বিচ্ছিন্ন, জব্দ, জরিমানা এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরুসহ গ্যাস অপচয় রোধে তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিতাস গ্যাসের জোবিঅ-বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) এর আওতায় কুড়িপাড়া, মদনপুর, বন্দর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন মনিজা খাতুন, সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
অভিযানে একটি অবৈধ চুন ফ্যাক্টরি (মোট ৫টি চুল্লি/ভাট্টি সম্বলিত) থেকে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এ সময় ৫৭ ফুট লাইন পাইপ, ২টি ২” ভাল্ব, ২টি ২” সার্ভিস টি, ৩টি বার্নার ও ১৫টি বেলচা জব্দ করা হয়।
ফ্যাক্টরির মালিক বা জমির মালিক ঘটনাস্থলে না থাকায় জরিমানা বা আটক করা সম্ভব হয়নি, তবে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মৌখিক নির্দেশনায় তাদের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক লিগ্যাল বিভাগ, নারায়ণগঞ্জ থানায় এফআইআর দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। অবৈধ চুন ফ্যাক্টরিটি এক্সক্যাভেটরের মাধ্যমে ভেঙে ফেলা হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণ ও চুন ভিজিয়ে নষ্ট করা হয়।
এছাড়া মদনপুর থেকে আকিজ সিমেন্টগামী ৮” x ১৪০ পিএসআইজি বিতরণ লাইনের অবৈধ ২” লাইনও বিচ্ছিন্ন করে উৎসস্থলে কিলিং করা হয়।
একই দিনে, রূপগঞ্জের মাহনা, টেকাপাড়া, সাওঘাট ও ভুলতা এলাকায় তিতাস গ্যাসের জোবিঅ-আড়াইহাজারের আওতাধীন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুর রহমান।
অভিযানে প্রায় ১.৮ কিলোমিটার এলাকায় আনুমানিক ৩৫০টি বাড়ির ৫৫০টি আবাসিক চুলার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এছাড়া প্রায় ৩০০ ফুট ২” ব্যাসের পাইপ অপসারণ ও জব্দ করা হয়।
এদিন আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়: সাওঘাট এলাকার বিসমিল্লাহ ফিলিং ও সিএনজি স্টেশনের (গ্রাহক সংকেত: ৭৩৭-০০০২২, ৮৩৭-০০০৫০১) সংযোগ বকেয়া বিলের কারণে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং উৎসস্থলে ক্যাপিং/কিলিং করে দেওয়া হয়।
সাভার এলাকায় রাজফুলবাড়ীয়া, দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর, তেঁতুলঝোড়া, হেমায়েতপুর অঞ্চলে তিতাস গ্যাস সাভার জোনের অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিল্টন রায়।
অভিযানে আলহামদুলিল্লাহ ফ্যাশন হাউজ ও মেসার্স আল আকসা ওয়াশিং প্ল্যান্ট নামক দুইটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এই অভিযানে ৪৮০ ফুট পাইপ লাইন অপসারণ করা হয়, যার মাধ্যমে মাসিক প্রায় ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ২৬০ টাকার গ্যাস চুরি রোধ করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখিত দুই প্রতিষ্ঠানকে মোট ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি-র মিডিয়া ও জনসংযোগ শাখার পক্ষ থেকে জানানো হয়, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে তিতাসের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে।
অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। গ্যাস অপচয় রোধ, বৈধ গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিতকরণ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষার জন্য তিতাসের এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।
তিন জেলায় একযোগে পরিচালিত এই অভিযানে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন, গ্যাস চুরি রোধ, জরিমানা, মামলা ও সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে। জ্বালানির অপব্যবহার রোধে তিতাস গ্যাসের এমন সুশৃঙ্খল ও কার্যকর অভিযান নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় স্বার্থ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হলে দেশের গ্যাস খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বৃদ্ধি পাবে।